ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ

রায়পুর/বিজাপুর, ১৯ ডিসেম্বর: ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুর জেলার ভৈরমগড়–ইন্দ্রাবতী অঞ্চলের গভীর বনাঞ্চলে শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে তীব্র গুলির লড়াই শুরু হয়েছে। এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সশস্ত্র মাওবাদী ক্যাডারদের উপস্থিতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিজাপুর জেলা রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি)-এর একটি দল নকশাল-বিরোধী অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানের সময়ই দুই পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই বেধে যায়।

শুক্রবার ভোর থেকে দফায় দফায় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষ এখনও চলছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ডিআরজি দল গভীর জঙ্গলের ভেতরে রয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত আছে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। তবে দুর্গম ও সংবেদনশীল ভূপ্রকৃতির কারণে তল্লাশি ও কম্বিং অপারেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত হতাহতের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।

বিজাপুর জেলা নকশাল-বিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এখানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মাওবাদী নিকেশ হয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ আগেই বাস্তার ডিভিশনের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক সংঘর্ষে একাধিক মাওবাদী নিহত হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ছত্তীসগঢ় জুড়ে এখনও পর্যন্ত ২৮০ জনের বেশি মাওবাদী নিকেশ হয়েছে। কেন্দ্রের লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে দেশকে বামপন্থী চরমপন্থা মুক্ত করার পরিকল্পনার সঙ্গেই এই অভিযানগুলি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সংঘর্ষস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হয়েছে এবং পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও বেসামরিক নাগরিকের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ সালেই শুধুমাত্র বিজাপুর জেলায় ১৪৪ জন মাওবাদী নিকেশ হয়েছে। পাশাপাশি ৫০০-র বেশি মাওবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় ৫৬০ জন আত্মসমর্পণ করেছে।

রাজ্য পুলিশ, ডিআরজি, সিআরপিএফ-এর কোবরা ইউনিট এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বিত অভিযানের ফলে মাওবাদী সংগঠনের কাঠামো উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের উন্নতি, সামনের সারিতে বাহিনী মোতায়েন এবং আত্মসমর্পণের প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে নকশাল প্রভাবিত জেলার সংখ্যা কমছে বলে দাবি প্রশাসনের।

এই ধারাবাহিক সাফল্য ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার লক্ষ্যের দিকে সরকারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply