মার্কিন ভিসা সংকট আরও গভীর, ভারতে এইচ-১বি সাক্ষাৎকার পিছিয়ে অক্টোবর ২০২৬

নয়াদিল্লি, ১৮ ডিসেম্বর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা সংকট আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। ভারতে এইচ-১বি ও এইচ-৪ ভিসার জন্য অপেক্ষারত শত শত ভারতীয় আবেদনকারীর সাক্ষাৎকারের তারিখ ফের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে বহু ক্ষেত্রে এই সাক্ষাৎকার অক্টোবর ২০২৬ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে। এর ফলে আমেরিকায় চাকরির সুযোগ পাওয়া বহু ভারতীয় পেশাদার চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

ডেকান ক্রনিকল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগে যেসব আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার ফেব্রুয়ারি বা মার্চ ২০২৬-এ নির্ধারিত হয়েছিল, সেগুলিও এখন পিছিয়ে অক্টোবর ২০২৬ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য আমেরিকান বাজার জানিয়েছে, ইমিগ্রেশন আইনজীবীরাও এমন বহু ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন, যেখানে ২০২৬ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি নির্ধারিত সাক্ষাৎকার হঠাৎ করেই বছরের শেষ ভাগে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বহু আবেদনকারী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ যাঁদের সাক্ষাৎকার নির্ধারিত রয়েছে, তাঁদের বুকিং বাতিল করার অনুরোধ জানাচ্ছেন, যাতে পুনর্নির্ধারিত কেসগুলিকে আগের তারিখে আনা যায়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে মার্কিন কনস্যুলেটগুলি বহু আবেদনকারীকে জানিয়েছে যে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে নির্ধারিত সাক্ষাৎকার পিছিয়ে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে নেওয়া হচ্ছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, ভিসা আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই আরও কড়া হওয়ায় অতিরিক্ত সময় লাগছে, যার জেরেই এই বিলম্ব।

এই ধারাবাহিক স্থগিতাদেশে বহু ভারতীয় পেশাদার, যাঁদের অনেকেই পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে রয়েছেন, কার্যত আটকে পড়েছেন। চাকরি থাকবে কি না, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।

ইমিগ্রেশন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হঠাৎ করে ব্যাপক হারে সাক্ষাৎকার বাতিল ও পুনর্নির্ধারণ শুরু হয়েছে। যেসব আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার ২০২৬ সালের শুরুতে হওয়ার কথা ছিল, সেগুলিকে এখন বছরের শেষ প্রান্তিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

হায়দরাবাদে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের এক মুখপাত্র ডেকান ক্রনিকল-কে জানিয়েছেন, “সম্পদের প্রাপ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিয়মিতভাবে সাক্ষাৎকারের সময়সূচি বদল করে। কোনও পরিবর্তন হলে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের সরাসরি জানানো হবে।”

এই পরিস্থিতিতে আইনজীবী সংগীত মুগুন্ধন জানান, “এই বাতিলের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। প্রভাবিত আবেদনকারীদের উচিত নিয়োগকর্তার সঙ্গে কথা বলে রিমোট কাজ বা ছুটি নেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।” তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে চাকরি বা ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে সমস্ত নথি সংরক্ষণ করা জরুরি।

অনেক আবেদনকারী ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট কেটেছেন, ছুটির ব্যবস্থা করেছেন, এমনকি ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য ভারতে চলে এসেছেন। পরে তাঁরা জানতে পারছেন যে তাঁদের সাক্ষাৎকারের তারিখ আর নেই।

বিশেষত যাঁরা ইতিমধ্যেই আমেরিকার বাইরে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও কঠিন। পরিবারের থেকে দীর্ঘ বিচ্ছেদ এবং আমেরিকায় ফেরার সীমিত সুযোগ তাঁদের চরম সমস্যায় ফেলেছে।

নতুন করে সাক্ষাৎকার পিছোনোর খবর ছড়াতেই ভারতীয় প্রবাসী ফোরাম ও মেসেজিং গ্রুপগুলিতে উদ্বেগ ও ক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে, আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন—দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকা আদৌ নিরাপদ গন্তব্য কি না।

উল্লেখ্য, চলতি বছরেই এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসার দেরিতে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছিল। তার পর কর্মভিত্তিক ভিসার ফি বাড়ানোর প্রস্তাব এইচ-১বি সম্প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এবার এইচ-১বি সাক্ষাৎকার ২০২৬-এর শেষ দিকে ঠেলে দেওয়ায়, শত শত ভারতীয় পেশাদার বলছেন, তাঁদের কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন কার্যত এক সূক্ষ্ম সুতোর ওপর ঝুলে রয়েছে, যার শেষ কোথায়—তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Leave a Reply