তরুণ নেতৃত্বে জোর বিজেপির, ৪৫ বছরে জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি নীতিন নাভিন

নয়াদিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর: ভারতের রাজনীতিতে যখন অধিকাংশ বড় দলের নেতৃত্ব সত্তর ও আশির কোঠার প্রবীণ নেতাদের হাতে, তখন ভিন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিহারের মন্ত্রী নীতিন নাভিনকে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করেছে বিজেপি। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে জাতীয় স্তরের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি বর্তমানে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সি।

রবিবার বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং-এর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলের সংসদীয় বোর্ডের অনুমোদনেই এই নিয়োগ হয়েছে এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। বর্তমানে নীতিন নাভিন নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন বিহার সরকারের সড়ক নির্মাণ দপ্তরের মন্ত্রী।

বিজেপির এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (৮৩), এনসিপি-এসপি প্রধান শরদ পওয়ার (৮৫), তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (৭০), বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী (৬৯) এবং ডিএমকে সভাপতি ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন (৭২)—সেখানে বিজেপির জাতীয় স্তরের নেতৃত্বে তুলনামূলকভাবে তরুণ মুখ তুলে ধরা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।

এছাড়াও আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল (৫৭), জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ (৫৫) এবং সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব (৫২)—তাঁরাও বয়সে নীতিন নাভিনের চেয়ে প্রবীণ।

এই প্রেক্ষাপটে নীতিন নাভিনের নিয়োগ বিজেপির নেতৃত্বে প্রজন্মগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

নীতিন নাভিনকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “তিনি দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ, পরিশ্রমী ও উদ্যমী নেতা। বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসেবে বিহারে তাঁর কাজ অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর বিনয়ী স্বভাব এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করার মানসিকতা তাঁকে আলাদা করে চিহ্নিত করে।” প্রধানমন্ত্রী আরও আশা প্রকাশ করেন, নাভিনের শক্তি ও প্রতিশ্রুতি বিজেপিকে আগামী দিনে আরও মজবুত করবে।

বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়াল্লা এক্স-এ লেখেন, “বিজেপি বনাম কংগ্রেস। বিজেপি ৪৫ বছরের নীতিন নাভিনকে জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি করেছে। এতে স্পষ্ট, বিজেপি যোগ্যতা, প্রতিভা ও যুবশক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়।”

উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের ২৩ মে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে জন্ম নীতিন নাভিনের। তিনি প্রয়াত নবীন কিশোর প্রসাদ সিনহার পুত্র, যিনি বিজেপির প্রবীণ নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

পাটনার বাংকিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি পাঁচবারের বিধায়ক। ২০০৬ সালের উপনির্বাচনে প্রথম জয়ের পর ২০১০, ২০১৫, ২০২০ এবং ২০২৫ সালের নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে জয়ী হন। ২০২৫ সালের নির্বাচনে তিনি ৫২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।

মন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নীতিন নাভিন বিজেপির যুব মোর্চার জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সিকিম ও ছত্তীসগড়ে সংগঠন ও নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও সামলেছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্ব গড়ে তোলার কৌশলেই তরুণ ও প্রশাসনিকভাবে দক্ষ নেতাদের সামনে আনছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একাধিক রাজ্যে তুলনামূলকভাবে তরুণ ও প্রথমবারের মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ সেই কৌশলেরই প্রতিফলন। নীতিন নাভিনের নিয়োগ সেই ধারাবাহিকতারই নতুন অধ্যায় বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply