লিয়োনেল মেসির কলকাতা সফরে যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলা, ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা

কলকাতা, ১৩ ডিসেম্বর : কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির আগমনকে ঘিরে তৈরি হলো উত্তেজনার পরিস্থিতি। শনিবার সকাল ১১:৩০ মিনিটে মেসির গাড়ি যুবভারতী স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতেই, তাঁর পিছনে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মন্ত্রীদের এক বিশাল দল। মেসিকে ঘিরে ধরা হয় প্রায় ৭০-৮০ জন মানুষ, যার ফলে গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। মেসির আগমনে উচ্ছ্বসিত দর্শকরা যদিও তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিনের উপর নির্ভর করেছিলেন, কিন্তু তাদেরও হতাশ হতে হয়।

স্টেডিয়ামে ঢোকার পর থেকেই মেসির চারপাশে ছিল বিশাল ভিড়। মন্ত্রী ও কর্তা ব্যক্তিরা মেসিকে ঘিরে রাখায়, তাঁর সাথে লুইস সুয়ারেজ এবং রদ্রিগো ডি’পলকেও দেখা যায়নি। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে থাকা টিকিটধারী ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। “উই ওয়ান্ট মেসি” স্লোগান দিতে শুরু করেন তাঁরা, এবং পরে বোতল এবং চেয়ার ছুড়ে ফেলেন মাঠে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, মাঠে ঢুকে পড়েন দর্শকরা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী দিশাহারা হয়ে পড়ে।

ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং আয়োজক শতদ্রু দত্ত মাইক্রোফোনে ঘোষণা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেন না। ১৬-১৭ মিনিট মাঠে থাকার পর, মেসিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে নেওয়া হয়, এবং তার আগেই মাঠে পৌঁছাননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহরুখ খান বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

মেসি যখন মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মাঠে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে আসা ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে গ্যালারির হোর্ডিং ভাঙচুর করেন এবং চেয়ার ছুড়ে ফেলেন মাঠে। মাঠে বোতল পড়ে এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যে দর্শকরা ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে মাঠে প্রবেশ করেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করলেও, তাদের আয়োজিত নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে জনতাকে ফেরানো সম্ভব হয়নি।

যুবভারতী স্টেডিয়ামে অন্তত দুই হাজারেরও বেশি মানুষ মাঠে ঢুকে পড়ে। সেখানে অনেকেই সেলফি তুলছিলেন, কিছু জন ফাঁকা মাঠে নানা অঙ্গভঙ্গি করে আনন্দ করছিলেন, আর কিছু দর্শক গেরুয়া পতাকা হাতে মাঠে নাচছিলেন। প্রায় পঁচিশ মিনিটের মধ্যে, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।

এই ঘটনার ফলে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, মেসিকে দর্শকদের সামনে প্রদর্শনের জন্য কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। অনেকের মতে, মেসিকে কিছু নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে মাঠে সঠিকভাবে ঘোরানো গেলে সবাই তাঁকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আয়োজনের মধ্যে পরিকল্পনাহীনতার ছাপ ছিল।

সব মিলিয়ে, মেসির সফর কলকাতার জন্য এক লজ্জাজনক মুহূর্ত হিসেবে রয়ে গেল।

Leave a Reply