নয়াদিল্লি, ৬ ডিসেম্বর: আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং পারস্পরিক সুবিধা এগুলোই আগামীদিনে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা একথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এবং মানুষে মানুষে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে আমরা একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব
সন্তোষজনক এই মন্তব্য তিনি রাজধানীর পুরাতন ইন্ডিয়া হাউসে ‘মৈত্রী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তাদের উদ্দেশে বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, নাগরিক সমাজ এবং সাংবাদিকরা।ভার্মা বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে—বাংলাদেশকে একটি ‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অগ্রগামী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে তারা সহায়তা চালিয়ে যাবে।
তিনি স্মরণ করেন, মৈত্রী দিবস হলো সেই দিন, যখন ৫৪ বছর আগে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত রয়েছে। তবে ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বিশেষভাবে স্মরণীয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার দশ দিন আগেই ভারতের স্বীকৃতি—এটি আমাদের সম্পর্কের ইতিহাসে এক অমোচনীয় ঘটনা। তিনি বলেন, এই দিন দুই দেশের মধ্যে সহমর্মিতা এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সম্পর্কের সূচনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় বীরদের রক্তে আবদ্ধ স্মৃতির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
ভার্মা বলেন, আজকের মতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু যা অর্জন করেছি তা স্মরণই করি না, বরং সামনে নতুন দিগন্ত দেখার সুযোগ পাই। তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে দুই দেশ অনেক দূর এসেছে। আমরা আজ দুইটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং আমাদের অগ্রগতি পরস্পর যুক্ত।
তিনি আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন বহুমাত্রিক এবং একে অপরের জাতীয় উন্নয়নের পরিপূরক। “আমাদের বিশ্বাস, আমাদের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি পরস্পর সম্পর্কিত।
অন্যদিকে, ভার্মা বলেন, দুই দেশের মানুষই এই সম্পর্কের প্রধান অংশীদার। তাই সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মানুষ যেন এর সুফল পায়। তিনি উল্লেখ করেন, সীমান্ত পারাপার পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সংযোগ, বাণিজ্য এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক এসবই মানুষের কল্যাণে।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতি এখন এতটাই পরস্পর যুক্ত যে, আমরা একা এগিয়ে যেতে পারি না। আমরা চাই এই পারস্পরিক নির্ভরতা আরও দৃঢ় হোক এবং নতুন সুযোগ সৃষ্টি করুক। মৈত্রী দিবস সম্পর্কে বর্মা বলেন, এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা, সংস্কৃতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহমর্মিতা এসবের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপস্থাপন করা হয়। এতে ‘৭১ ইন সাইলেন্স’ নামে প্রতিবন্ধী-অন্তর্ভুক্ত থিয়েটার, এরপর নৃত্য পরিবেশনা এবং শেষে বাংলাদেশি ব্যান্ড ‘শিরোনামহিন’-এর পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়।

