নয়াদিল্লি, ১ ডিসেম্বর : সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে “গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ” অধিবেশন নিশ্চিত করার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংসদ যেন “পরাজয়ের হতাশায় যুদ্ধক্ষেত্র না হয়” বা “জয়ের অহংকারে প্রদর্শনীর মঞ্চ না হয়ে ওঠে।”
লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য সমাপ্ত বিহার নির্বাচন ভারতীয় গণতন্ত্রের শক্তি প্রমাণ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভোটদানের হার ও বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের অংশগ্রহণ নতুন দিগন্ত খুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু দল পরাজয় মেনে নিতে পারে না। আমি আশা করেছিলাম বিহার নির্বাচনের পরে নেতারা নিজেদের সামলে নেবেন, কিন্তু তাঁদের বক্তব্যে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।”
তিনি বিরোধীদের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংসদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জাতীয় উন্নয়ন ও আইন প্রণয়ন।
সংসদীয় আচরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, “পার্লামেন্টের বাইরে নাটকের জন্য যথেষ্ট জায়গা আছে। এখানে হতে হবে ‘ডেলিভারি’, নাটক নয়। নীতিই স্লোগানের উপরে প্রাধান্য পাক।”
তিনি আরও জানান, ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যকে আরও শক্তিশালী করেছে। সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলিরও দায়িত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং অর্থবহ বিতর্ককে প্রাধান্য দেওয়া।
শীতকালীন অধিবেশন ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৯ দিনের মধ্যে মোট ১৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অধিবেশনে মোট ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিল উত্থাপন ও আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় আবগারি (সংশোধন) বিল, ২০২৫, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জাতীয় সুরক্ষা কর বিল, ২০২৫ এবং মণিপুর জিএসটি (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল, ২০২৫। ধারণা করা হচ্ছে, এসব বিল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে উপস্থাপন করবেন। সংসদীয় সূত্রে জানা গেছে, অধিবেশনে আর্থিক ও প্রশাসনিক সংস্কারমূলক আইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনের কার্যসূচি শুরু হবে প্রয়াত সাবেক সাংসদ কর্নেল (অব.) সোনা রাম চৌধুরী, বিজয় কুমার মালহোত্রা, রবি নাইক এবং অভিনেতা-রাজনীতিবিদ ধর্মেন্দ্র-র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যমে।
অধিবেশন শুরুর আগে ভারত জোট কৌশল নির্ধারণে বৈঠক করে, যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নিজস্ব বৈঠকের কারণে আলোচনা এড়িয়ে যায়।
গত বর্ষাকালীন অধিবেশন বিঘ্ন ও স্লোগানবাজির জন্য প্রায় ফলশূন্য হয়েছিল। তা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
“নেতিবাচকতা রাজনীতিতে কাজ করতে পারে, কিন্তু জাতি গঠনে দরকার ইতিবাচক মানসিকতা।”
প্রধানমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট — সংসদীয় অধিবেশনকে রাজনৈতিক অশান্তির নয়, জাতীয় কার্যকারিতার মঞ্চে পরিণত করতে হবে।

