দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ঘূর্ণিঝড়–জনিত বন্যা ও ভূমিধস: ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫০২, মোট নিহত প্রায় ৭০০

জাকার্তা/ব্যাংকক/কুয়ালালামপুর, ১ ডিসেম্বর : দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় বিরল এক ক্রান্তীয় ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট টানা বৃষ্টিপাত ও প্রবল বাতাসে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড জুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর উদ্ধার অভিযান জোরদার হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতির পর সোমবার বিপর্যয়ের পরিমাণ আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন দেশে মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৭০০ জনে পৌঁছেছে।

ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০২, নিখোঁজ ৫০৮ জন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী। থাইল্যান্ডে অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, পাশাপাশি ৩ জন নিহত মালয়েশিয়ায়।

মালাক্কা প্রণালীতে বিরল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে প্রবল বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়া চলেছিল, যা উদ্ধারকর্মীদের কাজ ব্যাহত করে। ভূমিধস ও বন্যায় বহু মানুষ আটকা পড়েছেন।

পশ্চিম সুমাত্রার পালেম্বায়ান এলাকায় সোমবার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় শত শত মানুষ কাদামাটি ও ভাঙাচোরা গাছপালা সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার কাজে নিযুক্ত হন।
বাসিন্দারা নষ্ট হয়ে যাওয়া বাড়ি থেকে নথিপত্র ও মোটরসাইকেলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্টা করেন। সামরিক সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন, পাশাপাশি পানীয় জল দিচ্ছেন দুর্গতদের।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি প্রদেশ সফর করে বলেন, “কিছু রাস্তা এখনো বিচ্ছিন্ন, তবে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছি। আমরা এই বিপর্যয় মোকাবিলা করি সহনশীলতা ও সংহতি নিয়ে। আমাদের জাতি যথেষ্ট শক্তিশালী।” দেশটিতে প্রায় ২৮ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, ১৪ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত।

থাইল্যান্ডে দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি প্রদেশে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সেনাবাহিনীকে বড় পরিসরে মোতায়েন করা হয়েছে।
সংখলা প্রদেশে ১৩৮ জনের মৃত্যু, যেখানে ৮৫% জল সরবরাহ পুনরুদ্ধার হয়েছে, বুধবারের মধ্যে পুরোপুরি সচল হবে বলে জানিয়েছে সরকার।

হাট ইয়াই শহরে ২১ নভেম্বর একদিনে ৩৩৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা গত ৩০০ বছরে সর্বোচ্চ। প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল সাত দিনের মধ্যে বাসিন্দাদের ঘরে ফেরানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।

মালয়েশিয়ায় এখনো ১১,৬০০ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে চরম আবহাওয়া আরও ঘনঘন ও তীব্র হবে, যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় আরও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। উদ্ধার কাজ অব্যাহত থাকলেও এখনও বহু এলাকা বিচ্ছিন্ন। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব পেতে আরও সময় লাগবে বলে আশঙ্কা।