দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে বন্যা–ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়াল

নয়াদিল্লি, ৩০ নভেম্বর : দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় টানা প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ৬০০–র গণ্ডি পার করেছে। রবিবার সরকারি সূত্রে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে। বিরল এক ক্রান্তীয় ঝড় মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্ট হয়ে সাত দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া সৃষ্টি করে ওই তিন দেশে ব্যাপক ধ্বংস ডেকে আনে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩৫ জন, থাইল্যান্ডে ১৭০ জন এবং মালয়েশিয়ায় ৩ জন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। মোট ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত— যার মধ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ থাইল্যান্ডে এবং ১১ লক্ষ ইন্দোনেশিয়ায়।

পশ্চিম সুমাত্রা দ্বীপে তিনটি প্রদেশে ব্যাপক ভূমিধস ও বন্যার পর রবিবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩৫-এ (শনিবার পর্যন্ত ছিল ৩০৩)। এখনও ৪০৬ জন নিখোঁজ, এবং ২ লক্ষ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

হেলিকপ্টারে দুর্গত এলাকায় খাবার ও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। একটি নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে পশ্চিম সুমাত্রার পালেমবায়ান শহরের উপরে ভেসে থাকা বাড়িঘর, ভূমিধসে ভেসে যাওয়া জমি নজরে আসে।

একজন দুর্গত মহিলা আফ্রিয়ান্তি (৪১), যিনি শুধুমাত্র এক নামেই পরিচিত, জানান —”জল মুহূর্তের মধ্যে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমরা প্রাণভয়ে পালাই। শুক্রবার ফিরে এসে দেখি, বাড়ি পুরো ভেসে গেছে। একটা দেয়াল ছাড়া কিছুই নেই।”

দক্ষিণ থাইল্যান্ডে ১৭০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ১০২ জন আহত। সঙখলা প্রদেশে সর্বাধিক ১৩১ জনের মৃত্যু। হাট ইয়াই শহরে গত শুক্রবার ৩৩৫ মিমি বৃষ্টিপাত, যা গত ৩০০ বছরে একদিনে সর্বোচ্চ, বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩, যদিও ক্ষয়ক্ষতির পরিসর বড়। এখনও ১৮,৭০০ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। আবহাওয়া দপ্তর শনিবার ঝড়-সতর্কতা প্রত্যাহার করে পরিষ্কার আকাশের পূর্বাভাস দিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রবল ঝড় ও বৃষ্টিতে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এদিকে মালয়েশিয়ার বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থাইল্যান্ডে আটকে পড়া ৬,২০০–রও বেশি মালয়েশীয় নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রায় ভূমিধসে একজন ৩০ বছর বয়সী মালয়েশিয়ান নিখোঁজ, এবং ওই অঞ্চলে বসবাসরত মালয়েশিয়ান নাগরিকদের স্থানীয় কনস্যুলেটে নিবন্ধনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড়ে ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন। ১৯১ জন নিখোঁজ এবং ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বলে সরকারি তথ্য।

প্রবল জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে বহু এলাকা এখনও দুর্গম। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও ক্ষুধা ও ত্রাণের অভাবে কিছু স্থানে লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে, জানিয়েছেন উদ্ধার কর্মকর্তারা।

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই মহাবিপর্যয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
______

Leave a Reply