নয়া দিল্লি, ২৭ নভেম্বর : বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বৃহস্পতিবার এক প্রেস কনফারেন্সে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন যে কংগ্রেস ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে বিদেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবহার করছে। তাঁর বক্তব্যে কংগ্রেসের সামাজিক মিডিয়া কার্যক্রম, বিশেষত ‘এক্স’অ্যাকাউন্টের লোকেশন ফিচারের মাধ্যমে বিদেশি প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
সম্বিত পাত্র অভিযোগ করেন, কংগ্রেস নেতা এবং দলের রাজ্য অ্যাকাউন্টের অধিকাংশই প্রথমে বিদেশে অবস্থিত ছিল, যা ‘এক্স’ এর নতুন লোকেশন ফিচারের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা দেখতে পাচ্ছেন যে, কংগ্রেস নেতা পবন খেরা এবং দলের অন্যান্য অ্যাকাউন্টগুলি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশে অবস্থান করছে। তবে, ফিচারের ব্যবহার শুরু হওয়ার পরপরই এই অ্যাকাউন্টগুলো তাদের লোকেশন ভারত হিসেবে পরিবর্তন করেছে, যার মাধ্যমে পাত্র দাবি করেন যে, কংগ্রেস বিদেশি শক্তির মাধ্যমে ভারতের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।
সম্বিত পাত্র জানান, “কংগ্রেসের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের লোকেশন প্রথমে বিদেশি দেশে ছিল, তবে যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন তা দ্রুত পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে পওন খেরা এবং মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট অন্যতম।”
সম্বিত পাত্র আরও অভিযোগ করেন যে পবন খেরার ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টের লোকেশন প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের ছিল, তবে পরবর্তীতে সেটি পরিবর্তন করা হয়েছে। তাঁর মতে, খেরার অ্যাকাউন্টের লোকেশন যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত হওয়া ছিল অস্বাভাবিক এবং এটি সম্ভবত একটি ভিপিএন ব্যবহার করে পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “পওন খেরা কংগ্রেসের একজন বড় নেতা, এবং তাঁর অ্যাকাউন্টের লোকেশন যদি যুক্তরাষ্ট্রে থাকে, তাহলে সেটা সন্দেহজনক।”
সম্বিত পাত্র আরও জানান যে, ‘এক্স’ সম্প্রতি একটি নতুন ফিচার চালু করেছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাকাউন্টের লোকেশন দেখতে পারেন। এই ফিচারের মাধ্যমে কংগ্রেস এবং তার সমর্থকরা তাদের সঠিক লোকেশন গোপন করার জন্য নতুন উপায় গ্রহণ করেছে। পাত্র বলেন, “অনেকেই তাদের অ্যাকাউন্টের লোকেশন গোপন বা পরিবর্তন করেছে, এবং কিছু অ্যাকাউন্ট পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা সিঙ্গাপুরের মতো দেশ থেকে চালানো হচ্ছে।”
তিনি জানান, এই ফিচারটি কংগ্রেসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের লোকেশন প্রকাশ করে, যার মধ্যে ‘অল্ট নিউজ’, ‘কারাভান ইন্ডিয়া’ এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্টও অন্তর্ভুক্ত। তাঁর মতে, “এই সমস্ত অ্যাকাউন্টগুলো ভারতের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ তৈরি করার জন্য কাজ করছে।”
বিজেপির এই অভিযোগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যেখানে সম্বিত পাত্র বলেন যে কংগ্রেস বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারত সরকারকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তাঁর মতে, কংগ্রেস পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভারতীয় রাজনীতি এবং সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছে।
সম্বিত পাত্র আরো বলেন, “এটি খুব স্পষ্ট যে কংগ্রেস ও তার সমর্থকরা বিদেশি শক্তির সাহায্যে ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এই বিদেশি প্রভাবশালী অ্যাকাউন্টগুলো ভারতীয় ভোটারদের ভুল তথ্য সরবরাহ করছে এবং একটি বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি করছে।”
সম্বিত পাত্র আরও কিছু উদাহরণ দেন, যেমন হিমাচল কংগ্রেসের ‘এক্স’ অ্যাকাউন্ট, যা থাইল্যান্ডের মাধ্যমে চালানো হচ্ছিল, যদিও তা ভারতীয় হিসাবে চিহ্নিত ছিল। তিনি বলেন, “এই ধরনের অ্যাকাউন্টগুলো নিজেদের অবস্থান গোপন করতে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে কাজ করছে।”
এই অভিযোগের পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে দলটির নেতারা দাবি করেছেন যে বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এসব অভিযোগ উত্থাপন করছে। কংগ্রেস নেতারা জানান যে, বিজেপি এই ধরনের অভিযোগের মাধ্যমে গণমাধ্যম এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে চায়।
বিজেপির পক্ষ থেকে করা এই অভিযোগগুলি ভারতের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি কিভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে, তা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলি যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে তা ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
এদিকে, ‘এক্স’এর নতুন লোকেশন ফিচারের মাধ্যমে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রকাশিত তথ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের এই ফিচারটি এখন রাজনৈতিক দলগুলির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে রাজনৈতিক কার্যক্রমের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা এবং লোকেশন গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

