নতুন শ্রম কোড কার্যকর: ধর্মীয় বিভাজনের আড়ালে শ্রমিকদের উপর সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত : মানিক দে

আগরতলা, ২৪ নভেম্বর : দেশজুড়ে ধর্মীয় মেরুকরণ নিয়ে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়েই কেন্দ্রীয় সরকার নীরবে কার্যকর করল নতুন শ্রম কোড। জনগণকে বিভ্রান্তির মধ্যে ব্যস্ত রেখে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারে আঘাত হানা হলো। আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন সিট্যু নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মানিক দে।

তিনি বলেন, সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নতুন শ্রম কোড কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের শ্রম আইন কাঠামোয় কয়েকটি বড় পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, নতুন কোড অনুযায়ী, মালিকপক্ষ এখন থেকে কারখানা বন্ধ করতে বা বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাই করতে সরকারের অনুমতি নেবে না। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, এর ফলে ছাঁটাই আরও সহজ হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা চরমে পৌঁছবে।

তাছাড়া, এখন থেকে ধর্মঘটের ১৪ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। হঠাৎ কোনো অন্যায় বা দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ধর্মঘট ডাকা অবৈধ গণ্য হবে।
একসঙ্গে শ্রমিকেরা ছুটি নিলেও তা “অবৈধ ধর্মঘট” হিসেবে শাস্তিযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলির মতে, এটি সরাসরি শ্রমিকদের প্রতিবাদের অধিকার সীমিত করে। নতুন শ্রম কোডে দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে— যা পূর্ববর্তী ৮ ঘণ্টা কাজের নিয়মের থেকে বড় পরিবর্তন। শ্রমিক সমাজের দাবি, এটি শ্রমিকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে এবং কর্মপরিবেশ আরও অমানবিক হয়ে উঠবে।

মহিলা শ্রমিকেরা এখন থেকে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে কাজ করতে পারবেন। তিনি বলেন, সরকার জানিয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। তবে সমাজকর্মী ও শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, দেশে দিনের আলোতেও যেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না, সেখানে রাতের কাজকে ‘নিরাপদ’ বলা শুধুই কাগুজে আশ্বাস। এমনকি, উবার, ওলা চালক, সুইগি-জোম্যাটো ডেলিভারি কর্মী এবং খুচরো দোকানের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য ‘সামাজিক সুরক্ষা’র কথা বলা হলেও নিয়োগকারী কোম্পানিগুলির উপর কার্যত কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাঁর অভিযোগ, কোম্পানিগুলি যেমন খুশি কাজ করাতে পারবে, ছাঁটাই করতে পারবে, এমনকি শ্রমিকরা প্রতিবাদে নামলে সেটিও “অবৈধ” ঘোষিত হতে পারে।

তাঁর কথায়, নতুন শ্রম কোডের মাধ্যমে ভারতবর্ষের শ্রমজীবী জনগণকে কর্পোরেট স্বার্থে উৎসর্গ করা হয়েছে। মানিক দে-র দাবি, এটি শ্রমিকদের ক্রীতদাসে পরিণত করার প্রক্রিয়ার শুরু। কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। নতুন শ্রম কোড কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, মানবাধিকার সংগঠনসহ বহু মহল প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য— এই জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।