আগরতলা, ২৪ নভেম্বর: দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যাপক চর্চার সৃষ্টি করেছে ১৯ নভেম্বর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে দায়িত্ব পালন করা ২৭২ জন নাগরিকের স্বাক্ষরিত বিবৃতি। এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বিবৃতির উদ্দেশ্য, সময় এবং অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে।
এদিন এক প্রেস বিবৃতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা অভিযোগ করেন, এই বিবৃতিটি দেশের বর্তমান শাসকদলের দীর্ঘ ১১ বছরের প্রচার কৌশলেরই অনুকরণ। তিনি দাবি করেন, সরকারি প্রচার মাধ্যম, কর্পোরেট মালিকানাধীন কিছু সংবাদমাধ্যম এবং আইটি সেলের সহযোগিতায় যে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানো হয়—২৭২ জনের বিবৃতি তার পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়।
আশীষ সাহা অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের পর দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত বহু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। তিনি জানান— নির্ভুল ভোটার তালিকার অভাব, নির্বাচনী প্রচারে নিয়মভঙ্গ, শাসকদলের নেতাদের ঘৃণা-প্রচার, নির্বাচনে জাল ভোট, ভোটার অতিরিক্ততা, বহিরাগত ও বিদেশিদের ভোটদানের অভিযোগ, নির্বাচনী দিনের ভিডিও প্রকাশে অনীহা।
এসব অভিযোগ দেশবাসীর সামনে বহুবার এসেছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভুমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে এনে তাকে “পোষা টিয়া পাখি”তে পরিণত করা হয়েছে। নতুন ‘এসআইআর’ কর্মসূচিকে তিনি “ভোটচুরির নয়া ফন্দি” বলে আখ্যা দেন। তার দাবি, বিহারে মাত্র দেড়–দুই মাসের মধ্যে তড়িঘড়ি করা এসআইআর-এর ফলে বিরাট অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
শ্রী সাহার আরো অভিযোগ, বিহারের মোট ৭ কোটি ৪২ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৬৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা, অর্থাৎ ৪ কোটি ৯৭ লক্ষ। অথচ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী গণনা হয়েছে ৭ কোটি ৪৫ লক্ষ ভোট। এই অতিরিক্ত ২ কোটি ৪৮ লক্ষ ভোট কোথা থেকে এলো—এই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এছাড়াও এসআইআর-এ ৬৫ লক্ষ ভোটারের ইপিক যাচাই এবং ২১ লক্ষ নতুন ভোটার সংযোজনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, দেশের সংকটপূর্ণ মুহূর্তে এই ২৭২ জন নাগরিক কখনও মুখ খোলেননি। তিনি উদাহরণ দেন—রামমন্দির-বাবরি মামলা রায়ের বিচারকের বিতর্কিত মন্তব্য, পুলওয়ামা হামলায় নিরাপত্তা ব্যর্থতা, পেহেলগাম ও দিল্লিতে জঙ্গি হামলা, অপারেশন সিঁদুর বন্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে ট্রাম্পের মন্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণ
এই ঘটনাগুলিতে তাদের নীরব অবস্থানকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন।
আশীষ সাহা বলেন, “মোদি-শাহ, নির্বাচন কমিশন এবং ২৭২ জন বিবৃতিকারীর প্রতি দেশের মানুষের ঘৃণা ও ধিক্কারই প্রাপ্য। দেশের জনগণ আর নীরব থাকবে না। গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার দায় জনগণই নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে—এটিই সময়ের দাবি।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের মানুষ ভবিষ্যতে আর কোনও অনিয়ম, বিভ্রান্তিকর প্রচার বা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে নীরব থাকবে না।

