শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: “বিচার নয়, রাজনৈতিক প্রতিশোধ” দাবি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী’র

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর : বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিএ) থেকে এক অভূতপূর্ব ও চাঞ্চল্যকর রায় পেলেন। তাঁকে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন দমনকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কারণ এটি দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে। হাসিনা গত বছর ছাত্র বিক্ষোভের মুখে তার সরকারকে হারিয়ে দিল্লিতে নির্বাসিত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে এবং আজ সেই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল(আইসিটি) তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

আইসিটি-এর তিন বিচারপতির প্যানেল হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে বলেছে, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্র আন্দোলন দমন করতে নিরস্ত্র ছাত্রদের বিরুদ্ধে মারাত্মক শক্তি ব্যবহার করতে, যার মধ্যে ছিল ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্র। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ঢাকার চাঁখরপুল ও আশুলিয়া এলাকায় কয়েকটি ছাত্র হত্যাকাণ্ডের জন্য হাসিনার নির্দেশকে দায়ী করা হয়। ছয়জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল, এবং তাদের লাশের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এই রায় ঘোষণার পর হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, “এই রায় একটি বিরোধী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি একটি বিচারবহির্ভূত ও একপেশে ট্রাইব্যুনাল যা একটি অগণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা পরিচালিত।” তিনি আরও দাবি করেন, “এই রায় বিরোধী পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।”

এছাড়া, আদালত হাসিনাকে তার তিন সহ-অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান খান কামাল (প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন (প্রাক্তন পুলিশ প্রধান) এর সাথে একত্রে এই অপরাধে অভিযুক্ত করেছে। মামুন, যিনি রাষ্ট্রের সাক্ষী হয়েছেন, তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তবে কামালকেও হাসিনার মতো মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তাদের মতে, হাসিনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে, কারণ তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং উন্নয়ন অনেকদূর এগিয়েছে। হাসিনা নিজেও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, এবং বলেছেন, “আমি একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে মনে করি। এই ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্য ছিল আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা, তবে বাংলাদেশের জনগণ কখনও এই মিথ্যা রায়ের পক্ষে থাকবে না।”

বিচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে হাসিনা বলেছেন, “এই রায় আসল উদ্দেশ্যেই দেয়া হয়েছে—আমার সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় দায় চাপানো এবং এভাবে দেশের জনগণকে ভুল বোঝানো।” তিনি আরো বলেন, “যখন আমি প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নতি, শিক্ষা, এবং বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছিল। তবে এখন যে মানুষগুলো দেশ চালাচ্ছে, তারা ক্ষমতা দখল করার জন্য অপরাধীদের প্রশ্রয় দিয়েছে।”

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই রায়ের প্রভাব ইতিমধ্যে গভীর আলোচনা সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি বিচারক প্রক্রিয়ার অবিশ্বাস্য সঙ্কট যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বিপন্ন করতে পারে। বিশেষত, হাসিনার নেতৃত্বে আরো ১,৪০০ মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে, এবং অনেকেই মনে করছেন, তার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এই সহিংসতার জন্য দায়ী ছিলেন তারা।

এরই মধ্যে, বাংলাদেশের রাজনীতি তীব্র অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন, যা হাসিনার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেই সময়ের ক্ষোভ এখন দেশজুড়ে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন সৃষ্টি করেছে। ছাত্ররা, নাগরিক সমাজ, এবং রাজনৈতিক বিরোধীরা হাসিনার বিরুদ্ধে এই রায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে নতুনভাবে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মৃত্যুদণ্ড রায়, একটি গূঢ় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং একটি জাতির ভবিষ্যতের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সম্মান এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে, এবং এই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে আরও বড় প্রশ্ন তুলেছে—কি ঘটবে আগামী দিনে?

এখনকার জন্য, হাসিনার সঙ্গীদের একটাই দাবি এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার পুনরায় শুরু করা হোক, যেখানে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা এবং মোকাবেলা করা যাবে।