আইএমডি’র শীতকালীন পূর্বাভাস: উত্তরের রাজ্যগুলোতে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমবে, ঠাণ্ডা জিনিসপত্রের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ

নয়া দিল্লি, ১০ নভেম্বর : ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) আগামী কয়েক দিনেই দেশটির উত্তরের এবং মধ্য ভারতের রাজ্যগুলোতে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশেষত, হিমালয় অঞ্চলগুলোতে তুষারপাত এবং বৃষ্টিপাতের কারণে রাতের তাপমাত্রা অনেক রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। আবহাওয়া দফতর জনগণকে দ্রুত তাপমাত্রার পতনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে।

আইএমডি জানিয়েছে, একটি নতুন পশ্চিমী দিক থেকে আসা দুর্যোগ আগামী কয়েক দিন জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে তুষারপাত ও বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করবে। এর ফলে আশেপাশের রাজ্যগুলোতে রাতের তাপমাত্রা অত্যন্ত কমে যাবে এবং পশ্চিম ও উত্তর ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর আবহাওয়া শীতল হয়ে যাবে।

আইএমডি জানিয়েছে যে রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪-৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে এবং সন্ধ্যাগুলি সেগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। বিশেষ করে, দক্ষিণ পঞ্জাব, দক্ষিণ হরিয়ানা এবং দিল্লি অঞ্চলেও সন্ধ্যার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেছে।

রাজস্থানের ১২টি জেলা ইতোমধ্যে শীতের অনুভূতি পেতে শুরু করেছে, যেখানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে। সিকার জেলার তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গেছে, যা এই বছর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ঠাণ্ডা রেকর্ড। আলওয়ার, ঝুনঝুনু এবং উদয়পুরেও শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে।

মধ্যপ্রদেশে ভোপাল, রাজগড়, ইন্দোর এবং শাজাপুরে তাপমাত্রা কমেছে, যেখানে রাজগড়ে তাপমাত্রা ৭°C রেকর্ড করা হয়েছে। আইএমডি পরামর্শ দিয়েছে যে, এই ঠাণ্ডা প্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে, কারণ পশ্চিমী দুর্যোগের পর ঠাণ্ডা উত্তর-পশ্চিম বাতাসের প্রভাব থাকবে।

শীতের প্রভাব বিহার, পঞ্জাব এবং ছত্তিশগড়েও ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে তাপমাত্রা মৌসুমিক গড়ের নিচে নেমে গেছে। পাটনার তাপমাত্রা ১৭.৮°C এবং ছত্তিশগড়ের পেন্দ্র ৯°C রেকর্ড করেছে, যার ফলে ছত্তিশগড়ের সুরগুজা জেলা জন্য শীত প্রবাহ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

পঞ্জাবেও রাতের তাপমাত্রা ২°C কমে গেছে। আইএমডি কৃষক এবং যাত্রীদের জন্য পরামর্শ দিয়েছে যে, তারা যেন খুব সকালে বা রাতে বের হওয়ার সময় কুয়াশা এবং জমাট বরফ থেকে সাবধান থাকে।

উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে শীতের তীব্রতা বাড়লেও দক্ষিণ ভারত এখনও তুলনামূলকভাবে মৃদু আবহাওয়া বজায় রেখেছে। চেন্নাইতে আংশিক মেঘলা আকাশের সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং তাপমাত্রা ২৫°C থেকে ৩২°C এর মধ্যে থাকবে। আইএমডি দক্ষিণ ভারতের শহরগুলোতে কোনো তীব্র আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়নি, তবে তিরুবনন্তপুরমে বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আইএমডি জনগণকে রাতের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে। বিশেষভাবে, যেসব এলাকার তাপমাত্রা দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে, সেগুলোর জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে, আবহাওয়া দফতর সকলকে গরম কাপড় পরিধান করার পরামর্শ দিয়েছে, এবং খুব সকালে বা রাতে ঠাণ্ডা বাতাসে অতিরিক্ত সময় কাটানো এড়াতে বলা হয়েছে। কুয়াশাযুক্ত এলাকায় গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকার জন্য বিশেষভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, কৃষকদের জমির ফসল এবং প্রাণীদের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের আপডেট পর্যবেক্ষণ করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, আবহাওয়া বিশ্লেষকরা জানান, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য লা নিনা এর প্রভাবও থাকতে পারে। লা নিনা, যা এল নিনো সাউদার্ন অস্কিলেশন -এর ঠাণ্ডা পর্যায়, হিমালয় অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে শীতকালের তীব্রতা বা বর্ষা বাড়াতে পারে।

এভাবে, ভারতের উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলে শীতকালীন তীব্রতা একেবারে বাড়ানোর পূর্বাভাসে জনসাধারণকে আগেভাগে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।