নিজস্ব প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ৯ নভেম্বর:
আসন্ন সিআইটিইউ-র ১৬তম ত্রিপুরা রাজ্য সম্মেলনকে সামনে রেখে ধর্মনগর শহরের পুরাতন মায়া সিনেমা হলের সামনে এক বিশাল প্রকাশ্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগরতলায় ১০ নভেম্বরের প্রকাশ্য সমাবেশকে সফল করতে এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআইটিইউ-র রাজ্য সহ-সভাপতি অমিতাভ দত্ত, সিপিআই(এম) ধর্মনগর মহকুমার সম্পাদক রতন রায়, সিপিআইএম উওর জেলার সভাপতি অভিজিত দে সহ একাধিক নেতৃত্ব।
সভায় রাজ্যের বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান অমিতাভ দত্ত। তিনি অভিযোগ করেন, “রাজ্যের বর্তমান সরকার শ্রমিকস্বার্থবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছে। কর্মসংস্থান নেই, মজুরি বৃদ্ধি নেই, সরকারি প্রকল্পে চলছে লুটপাট।”তিনি আরও বলেন, “ধর্মনগরের কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। শহরের বহু দোকান ও রেস্তোরাঁ আজ বন্ধ অবস্থায়। এইসব নেতাদের কারণে ধর্মনগরের মানুষ অতিষ্ঠ।” অমিতাভ দত্তর জোরালো বক্তব্যে সভাস্থলে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
তিনি শ্রমজীবী মানুষদের রাজ্য সম্মেলন ও আগরতলার প্রকাশ্য সমাবেশকে ঐতিহাসিকভাবে সফল করার আহ্বান জানান।ভারতের ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ধর্মনগর পূর্ব জোন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই সভার সভাপতিত্ব করেন দীপ্তি দে। সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষক সভার রাজ্য কমিটির সদস্য ও সিপিআই(এম) ধর্মনগর মহকুমা সম্পাদক রতন রায়, উত্তর ত্রিপুরা জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দে এবং সিআইটিইউ ধর্মনগর মহকুমা সভাপতি নিরঞ্জন নাথ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, “মানুষের রক্তঝরা আর্তনাদ সারা রাজ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই সময় ঘরে বসে থাকার নয়, শ্রমিক-কৃষক ঐক্যের ডাক দিতে হবে।” তারা অভিযোগ করেন, রাজ্যের বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী কমিশন বাণিজ্যে যুক্ত। মন্ত্রী সুধাংশু দাসের স্বীকারোক্তির উল্লেখ করে বলেন, তিনি স্বয়ং মিডিয়ার সামনে ‘সোর্স মানি’-র কথাও স্বীকার করেছেন। ফলে ঠিকাদাররা কম টাকায় নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে পরিবহন শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।গ্রাম শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল চিত্র ফুটে উঠছে।
নেতৃত্বরা বলেন, বিজেপি জোট সরকার দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে এবং নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেও রেকর্ড গড়েছে। এই অবস্থার বিরুদ্ধে আগামী ১০ নভেম্বর শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ সমাবেশে অংশ নিয়ে প্রতিবাদের জোয়ার তুলতে হবে।এদিন বক্তারা আহ্বান জানান—ফ্যাসিস্ট শক্তির সমস্ত বাধা অতিক্রম করে আগরতলায় ১০ নভেম্বরের প্রকাশ্য সমাবেশকে ঐতিহাসিক সাফল্যে পরিণত করতে হবে। ১০ ও ১১ নভেম্বর সিআইটিইউ-র রাজ্য সম্মেলনে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকার, বেকারত্ব ও দমননীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।
বক্তাদের প্রশ্ন, “ধর্মনগর শান্তির শহর বলা হলেও আজ কি সত্যিই শান্তি আছে?” তারা উল্লেখ করেন, রাজ্যের ইন্ডিয়ান অয়েল ডিপোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শ্রমিক অসন্তোষ স্পষ্ট, এমনকি জেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এই অফিসটি গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে সিল করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষ আজ হয়রানি শিকার, এটাই কি সুশাসন। এদিনের সভায় উপস্থিত জনতা ও শ্রমজীবী মানুষদের আহ্বান জানান, আসন্ন রাজ্য সম্মেলন ও আগরতলার প্রকাশ্য সমাবেশকে ঐতিহাসিকভাবে সফল করার জন্য।শ্রমিক ঐক্য ও সরকারের শ্রমবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে একত্রে লড়াইয়ের অঙ্গীকারে শেষ হয় প্রকাশ্য সভা।

