হুগলি, ৯ নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তারকেশ্বর রেলস্টেশন চত্বরে এক চার বছরের শিশুকন্যাকে অপহরণ করে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে, যখন শিশুটি তার পরিবারের সঙ্গে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি তার নানীর পাশে মশারির নিচে ঘুমিয়ে ছিল। অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তি মশারির জাল কেটে শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ভোরে শিশুটিকে খুঁজে না পেয়ে পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর দুপুরে রেলস্টেশনের পাশের এক নর্দমার ধারে রক্তাক্ত অবস্থায়, নগ্ন ও গালে কামড়ের দাগসহ শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
অরামবাগ জেলা বিজেপির সম্পাদিকা পার্না আদক জানিয়েছেন, “শিশুটি গুরুতর রক্তপাত করছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিকিৎসা চলার পরও তার যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছিল না।” শিশুটিকে দ্রুত তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
তবে পরিবারের দাবি, শিশুটি তখনও গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল, তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবহিত করেনি। পরে পরিবার নিজেরাই থানায় গেলে, পুলিশ নাকি তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ আবার শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে আরও পরীক্ষার জন্য।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি নেতারা ও কর্মীরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও চিকিৎসকরা অবহেলার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে এক্স-এ লেখেন, “চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে তারকেশ্বরে। পরিবার থানায় গেলে এফআইআর নথিভুক্ত হয়নি! পুলিশ অপরাধ ঢাকতে ব্যস্ত। এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ফ্রি ফর অল’ শাসনের প্রকৃত চেহারা। শিশুর জীবন নষ্ট হয়ে গেল, অথচ পুলিশ রাজ্যের ভুয়ো আইনশৃঙ্খলার ভাবমূর্তি রক্ষায় সত্য লুকোচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী।”
অন্যদিকে, তারকেশ্বরের বিধায়ক রমেন্দু সিংহ রায় ঘটনাটিকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “রেলওয়ে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। পরিবারটি চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে থানার বাইরে চলে গিয়েছিল, তবে প্রশাসন পরে সব প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় পকসো আইনের অধীনে মামলা রুজু করা হয়েছে, এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

