নয়াদিল্লি, ৮ নভেম্বর : ভারত সরকার “এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ফিশারিজ টেকসই ব্যবহার নীতিমালা, ২০২৫” এর খসড়া ঘোষণা করেছে, যা গভীর সমুদ্র মৎস্যসম্পদ ব্যবহার ও উপকূলীয় জীবিকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্লু ইকোনমি গড়ে তোলার এবং বাজেট ২০২৫-২৬ এর এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা পূরণে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নতুন এই নীতিমালা ছোট মৎস্যজীবী সমবায় এবং ফিশ ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন গুলিকে গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করতে চায়। এছাড়াও, প্রশিক্ষণ, বৈশ্বিক এক্সপোজার এবং সাশ্রয়ী ঋণ সুবিধা প্রদান করা হবে, যা প্রধান মন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজন এবং মৎস্য এবং জলজ সম্পদ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল এর মতো নীতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধজাত মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, ইইজেড নীতিমালা ভারতীয় সামুদ্রিক মৎস্য খাতকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে উন্নত করবে, যেমন—মূল্য সংযোজন, ট্রেসেবিলিটি, সার্টিফিকেশন, এবং “মা-এবং-বাচ্চা” জাহাজ মডেল চালু করা, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’র নিয়ম অনুযায়ী সমুদ্রে ট্রান্সশিপমেন্ট পরিচালনার অনুমতি দেবে। বিশেষভাবে অ্যান্ডামান ও নিকোবর এবং লক্ষদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, যেগুলি ভারতের ইইজেড এর প্রায় অর্ধেক অংশ গঠন করে।
নতুন নীতিমালায় এলইডি লাইট মৎস্য শিকার, পেয়ার ট্রলারিং এবং বল ট্রলারিংয়ের মতো ক্ষতিকর মৎস্য শিকার পদ্ধতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এবং সমুদ্র-জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে এবং টেকসই জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে সি-কেজ ফার্মিং এবং সি-উইড চাষের মতো মেরিকালচার কার্যক্রমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মৎস্য প্রজাতির ন্যূনতম আইনগত আকার এবং মৎস্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রাজ্যের সাথে পরামর্শ করে বাস্তবায়ন করা হবে।
নতুন নীতিমালায় মেকানাইজড এবং বড় মোটরচালিত জাহাজের জন্য একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল “অ্যাক্সেস পাস” সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা রিয়েলক্র্যাফ্ট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তবে, ঐতিহ্যবাহী এবং ছোট মৎস্যজীবীরা, যারা মোটরচালিত বা অ-মোটরচালিত নৌকা ব্যবহার করেন, তাদের এই শর্ত থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, বিদেশি জাহাজগুলো ভারতের ইইজেড তে কোনো ধরনের চুক্তির মাধ্যমে কাজ করতে পারবে না।
ভারত সরকার অবৈধ, রিপোর্টহীন, এবং অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার বন্ধ করতে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে, যা সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা এবং ছোট মৎস্যজীবীদের স্বার্থ নিশ্চিত করবে।
নিরাপত্তা এবং উপকূলীয় সুরক্ষা বৃদ্ধির জন্য, নীতিমালায় মাছ ধরার নৌকা ও মৎস্যজীবীদের জন্য ট্রান্সপন্ডার এবং কিউআর-কোডেড আইডি কার্ড ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। রিয়েলক্র্যাফ্ট প্ল্যাটফর্মটি নাভমিত্র অ্যাপ্লিকেশনের সাথে একীভূত করা হয়েছে, যা ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনীকে সমুদ্র মনিটরিং ও যোগাযোগে সহায়তা করবে।
একই সাথে, মৎস্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে যে, ভারতের ইইজেড এর বাইরে যে মাছ ধরা হবে, তা এখন “ভারতীয় উৎস” হিসেবে স্বীকৃত হবে, এবং সেগুলি ভারতীয় বন্দরে এসে আমদানি হিসেবে গণ্য হবে না।
মৎস্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সংস্কারগুলি ভারতের সামুদ্রিক মৎস্য শাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ আধুনিকীকরণ হবে, যা প্রযুক্তি, স্বচ্ছতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে। এই উদ্যোগটি ভারতের সীফুড রপ্তানি বাড়াবে, সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণ করবে এবং ৫০ লাখেরও বেশি মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধি করবে।

