মাতরম’ হল জাগরণের ভোরের সঙ্গীত: গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ

নয়াদিল্লি, ৭ নভেম্বর: জাতীয় সঙ্গীত ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার এক ব্লগ পোস্টে লেখেন, ঔপনিবেশিক শাসনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে রচিত ‘বন্দে মাতরম’ হয়ে উঠেছিল ভারতের জাগরণের ভোরের গান।

এক্স- এ শেয়ার করা পোস্টে শাহ লেখেন, ব্রিটিশ শাসনের অন্ধকার সময়ে লেখা এই পবিত্র মন্ত্র ভবিষ্যতের প্রতিটি যুগে আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে ‘ভারতীয়তার’ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।

ব্লগে তিনি বন্দে মাতরম- এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। লেখেন, ভারতের ইতিহাসে এমন বহু মুহূর্ত এসেছে, যখন গান ও শিল্প সমাজ ও রাজনীতির আত্মা হয়ে উঠেছে — ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের সৈন্যদের যুদ্ধগান থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের দেশাত্মবোধক সঙ্গীত কিংবা জরুরি অবস্থার সময় তরুণদের প্রতিবাদী গান — সংগীত সর্বদাই ভারতীয় সমাজের সম্মিলিত চেতনা ও ঐক্যকে জাগিয়ে তুলেছে।

অমিত শাহ বলেন, এই সব গানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানটি অধিকার করে আছে ‘বন্দে মাতরম’। এটি কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নয়, বরং এক পণ্ডিতের ধ্যানমগ্ন মনে জন্ম নিয়েছিল — বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মনে। ১৮৭৫ সালে, জগদ্ধাত্রী পুজোর দিন (কার্তিক শুক্ল নবমী বা অক্ষয় নবমী), তিনি রচনা করেন এই চিরন্তন জাতীয় সঙ্গীত।

শাহের মতে, বঙ্কিমবাবুর এই গান ছিল একই সঙ্গে প্রার্থনা ও ভবিষ্যদ্বাণী। এটি ছিল সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের প্রথম ঘোষণা — যা মনে করিয়ে দেয়, ভারত কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি এক ভূ-সাংস্কৃতিক সভ্যতা।

তিনি আরও বলেন, মহর্ষি অরবিন্দের ভাষায়, বঙ্কিমচন্দ্র আধুনিক ভারতের এক ঋষি, যিনি নিজের লেখনী দিয়ে জাতির আত্মাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তাঁর
আনন্দমঠ কেবল একটি উপন্যাস নয়, বরং এক ‘গদ্যে লেখা মন্ত্র’, যা তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতিকে নিজের শক্তি চিনতে শিখিয়েছিল।

অমিত শাহ উল্লেখ করেন, বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই লিখেছিলেন — ‘আমার সব রচনা যদি গঙ্গায় বিলীন হয়, তাতে আপত্তি নেই; এই একটিমাত্র স্তোত্রই যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে।’ তাঁর এই কথাগুলি ছিল ভবিষ্যদ্বাণীমূলক।

গৃহমন্ত্রী বলেন, বন্দে মাতরম ভাষা ও অঞ্চলের সীমা ছাড়িয়ে সমগ্র ভারতে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তামিলনাড়ুতে সুব্রামানিয়া ভারতী একে তামিলে অনুবাদ করেছিলেন, আর পাঞ্জাবে বিপ্লবীরা ব্রিটিশদের অবজ্ঞা করে এটি গাইতেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় যখন আন্দোলন তীব্রতর হয়, তখন ব্রিটিশ সরকার ‘বন্দে মাতরম’ প্রকাশ্যে গাওয়া নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ১৯০৬ সালের ১৪ এপ্রিল বরিশালে হাজারো মানুষ সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ লাঠিচার্জ করলেও পুরুষ ও নারী একত্রে রক্তাক্ত অবস্থায় ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি তোলেন।

শাহ আরও বলেন, এই পবিত্র মন্ত্র কেবল ভারতে নয়, বিদেশের বিপ্লবীদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল — আমেরিকার গদর পার্টি, নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ, ১৯৪৬ সালের নৌবাহিনীর বিদ্রোহ, খুদিরাম বসু, আশফাকউল্লা খান, চন্দ্রশেখর আজাদ থেকে তিরুপুর কুমারন — সকলের মুখে ধ্বনিত হয়েছিল ‘বন্দে মাতরম’। মহাত্মা গান্ধীও স্বীকার করেছিলেন, এই গান এমন এক জাদুকরী শক্তি ধারণ করে যা ‘অকর্মণ্য রক্ত’কেও উষ্ণ করে তুলতে পারে।

তিনি লিখেছেন, মহার্ষি অরবিন্দ যেমন বলেছেন, এটি ছিল ‘ভারতের পুনর্জন্মের মন্ত্র’। এই গান একসূত্রে বেঁধেছিল উদারপন্থী ও বিপ্লবীদের, পণ্ডিত ও সৈনিকদের।

অমিত শাহ জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর মন কি বাত অনুষ্ঠানে (২৬ অক্টোবর) বন্দে মাতরম-এর এই গৌরবময় উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এক বছরব্যাপী জাতীয় উদ্‌যাপনের মাধ্যমে এই অমর সঙ্গীত আবারও দেশজুড়ে প্রতিধ্বনিত হবে।

তিনি আরও বলেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকীতে এবং ‘ভারত পর্ব’-এর সময় আমরা যখন একতার চেতনাকে স্মরণ করি, তখন বুঝতে পারি সর্দারের ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্নই আসলে ‘বন্দে মাতরম’-এর মর্মকথা জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

শেষে শাহ লিখেছেন, বন্দে মাতরম হল স্বাধীনতার গান, অবিচল সংকল্পের আত্মা এবং ভারতের জাগরণের প্রথম মন্ত্র। এই পবিত্র ধ্বনি যুগ যুগ ধরে প্রতিধ্বনিত হবে, আমাদের মনে করিয়ে দেবে ভারতীয়তার দৃষ্টিতে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে দেখা উচিত। বন্দে মাতরম!

।।।।।