লখনউ হোটেলে কান্ড : নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি স্পষ্ট, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সন্দেহেই ভুয়ো আমলা পুলিশের জালে

আগরতলা, ৪ নভেম্বর : লখনউ-তে বেসরকারি হোটেলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ছিল আজ অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহার সন্দেহ হয়েছে বলেই ভুয়ো আমলা পরিচয় দিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাতে যাওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ওই ঘাটতি কিভাবে হয়েছে, তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। সাথে তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, এ-ধরণের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আগামি দিনে সকলকেই আরও সতর্ক থাকতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ অক্টোবর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক(ডা.) মানিক সাহা কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে সম্মেলনে যোগ দিতে লখনউয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হোটেলে পৌছানোর পর বিহারের বাসিন্দা প্রশান্ত মোহন নিজেকে অর্থ মন্ত্রকের অতিরিক্ত কমিশনার পরিচয় দিয়ে এবং লখনউ পুলিশ কমিশনারের আত্মীয় দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন। কিন্তু, হোটেলের কক্ষে কথোপকথনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সন্দেহ হয় এবং তিনি ওই ব্যক্তিকে বের করে দেন। বিষয়টি তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের জানান এবং ওই ব্যক্তির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, ধৃত প্রশান্তের কাছ থেকে ভুয়ো আইআরএস ও আইএএস পরিচয়পত্র, ভিজিটিং কার্ড, একটি আই ফোন, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, একটি ট্রলি ব্যাগ এবং ১৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, প্রশান্ত মোহন বিভিন্ন রাজনীতিকের সঙ্গে দেখা করতেন। তার পর তাঁদের সঙ্গে তোলা এবং ওই ছবি ব্যবহার করে আবার অন্যদের প্রতারণা করতেন। প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, প্রশান্ত দিল্লির শক্তিপুর পূর্ব এলাকায় থাকত এবং একাধিক বার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু কখনও উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বর্তমানে তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং তার অতীতের রেকর্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এবিষয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ওই ব্যক্তি কিভাবে তাঁর হোটেলের কক্ষে ঢুকেছে তিনি নিজেও জানতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওই ব্যক্তির সাথে কথোপকথনের সময়েই সন্দেহ হয়েছিল। তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতেই সন্দেহ বাড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি তাঁর নিরাপত্তা কর্মীদের জানান। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ওই ব্যক্তি প্রশাসনিক আধিকারিকের পরিচয়পত্র দেখিয়ে এসেছিলেন। এমন অনেকেই আসেন। তবে, এবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, আমরা ইতিপূর্বে এধরণের পরিবেশে থাকার অভ্যস্ত নই। কিন্তু, ওই ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় আমার সন্দেহ হয়েছে, তাতেই প্রকৃত সত্য সামনে এসেছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, আধিকারিক স্তরের পরিচয় দিয়ে কেউ আসেন তখন কিছু করার থাকে না। বড় বড় রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে বিভিন্ন ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। ফলে, যখন কিছু ঘটে, তখনই আমরা সতর্ক হই। তিনি লখনউয়ে হোটেলে ওই ঘটনায় সকলের চোখ খুলে দিয়েছে বলে জোর গলায় দাবি করেছেন। সাথে তিনি বলেছেন, আগামি দিনে আমাদের আরও বেশি সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভুয়ো আমলা পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি কিভাবে তাঁর হোটেলের কক্ষে ঢুকেছেন তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।

আজ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ছিল। তিনি সরাসরি স্বীকার করেননি ঠিকই। কিন্তু, যদি ওই ব্যক্তির উপর তাঁর সন্দেহ না হতো, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছবি তুলে হয়তো অনৈতিক কাজ করার পরিকল্পনায় সফল হয়ে যেত প্রশান্ত মোহন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাইরে যাওয়ার পূর্বেই তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত কয়েকজন কর্মী আগেই সেখানে চলে যান। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে যাওয়ার পর যদি কেউ তাঁর সাথে দেখা করতে চান তাহলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মী ওই ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের গোচরে নেন। সমস্ত দিক থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয় এবং তাঁর অনুমতি চাওয়া হয়।

কিন্তু, লখনউ হোটেলে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সমস্ত নিয়ম যথাযথভাবে মানা হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে, মুখ্যমন্ত্রীর সজাগ দৃষ্টির কারণেই বড় ধরণের ঘটনা আটকানো গেছে বলেই মনে হচ্ছে।