ত্রিপুরায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা: কংগ্রেসের তীব্র উদ্বেগ, মানবাধিকার কমিশনের নিকট ডেপুটেশন

আগরতলা, ৩ নভেম্বর: রাজ্যের সর্বত্র লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবধিকার। তারপরও রাজ্য মানবধিকার কমিশন কুলুপ এঁটে বসে রয়েছে। মূলত এই প্রশ্ন তুলে ১১ দফা দাবিতে মানবধিকার কমিশনের দরবারে হাজির হল কংগ্রেসের আইনজীবী সেল।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেসের আইনজীবী সেল নেতৃত্বরা চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলী নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৮ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, অথচ রাজ্য মানবাধিকার কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

তাঁদের অভিযোগ, কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের আরও উৎসাহিত করেছে। কংগ্রেস ২০২৪-২৫ সালের মাত্র দেড় বছরের কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তালিকাভুক্ত করেছে, যা গত সাত বছরে কমিশনের ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

প্রথমত, উত্তর ত্রিপুরার কদমতলায় দুর্গাপূজা অনুদানকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিবাদ রূপ নেয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসায়। ৬-৭ অক্টোবরের ঘটনায় পুলিশ গুলি চালালে আলফেসানি নামে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়, আহত হন অন্তত ১৭ জন। বহু দোকান ও বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবার এখনও সরকারি চাকরি ও ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় রয়েছে, প্রশাসন নির্বিকার। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ ত্রিপুরার সবরুমের বাদল ত্রিপুরা (২৬) নামে এক আদিবাসী যুবক পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের পর মৃত্যুবরণ করেন। তার দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। কংগ্রেসের অভিযোগ, এটি স্পষ্টতই হত্যাকাণ্ড হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং পরিবারকেও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়নি।

তৃতীয়ত, আগরতলার জিবি হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ায় ৫৪ বছর বয়সি মদন দাসের মৃত্যু হয়। কর্তব্যরত কর্মীরা জরুরি চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। গণমাধ্যমের হস্তক্ষেপের পর চিকিৎসা শুরু হলেও পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। কংগ্রেসের দাবি, এটি রোগীর মৌলিক অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। এমন বহু ঘটনা থেকে প্রমানিত যে রাজ্যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

তাই প্রদেশ কংগ্রেস মানবাধিকার কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং রাজ্যে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক।