বিহারে নারীদের পক্ষে নীতীশ, অতীতের ছায়া মুছে ফেলতে ব্যস্ত তেজস্বী

নয়াদিল্লি, ৩১ অক্টোবর : বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের প্রতি নারী ভোটারদের সমর্থন তাঁর সরকারের ধারাবাহিক নির্বাচনী সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী মহাগঠবন্ধনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবও নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের নানা প্রকল্পে জোর দিচ্ছেন, তবে তাঁর কাঁধে রয়ে গেছে অতীতের একটি বিতর্কিত উত্তরাধিকার তাঁর পিতা লালু প্রসাদ যাদবের সময়কার ‘নারী সংরক্ষণ বিল’ বিরোধিতা।

১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে লালু প্রসাদ যাদব সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে মিলে সংসদে নারী সংরক্ষণ বিলের পথ রোধ করেছিলেন। মাত্র ৩৭ জন সাংসদের সমর্থন নিয়েই তিনি অন্যান্য দল, এমনকি কংগ্রেসকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ সেই সময় কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বিলটির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন।

তেজস্বী যাদব বর্তমানে সেই ইতিহাসের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন। অন্যদিকে, নীতীশ কুমার গত দুই দশকে নারী উন্নয়ন, আত্মনির্ভরতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন। এনডিএ-র অংশীদার হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারেরও সমর্থন পেয়েছেন।

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর পাটনায় এনডিএ-র যৌথ ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়, যেখানে নারীদের কর্মসংস্থান ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ‘মুখ্যমন্ত্রীর মহিলা কর্মসংস্থান প্রকল্প’, যার আওতায় নারীরা সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাবেন। পাশাপাশি, এক কোটি নারীকে “লক্ষপতি দিদি” হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে ‘লক্ষপতি দিদি যোজনা’ চালু হয়, যা মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠী -এর সঙ্গে যুক্ত নারীদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়।

নারী সংরক্ষণ সংবিধান (১২৮তম সংশোধনী) বিল, ২০২৩-এর মাধ্যমে মোদি সরকার সংসদে নারীদের সংরক্ষণের পথও প্রশস্ত করেছে। ১৯৯৮ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার বিলটি পাশ করাতে ব্যর্থ হয়েছিল লালু ও মুলায়মের প্রবল বিরোধিতার কারণে।

সে সময় রাজ্যে জেডি নেতা শরদ যাদবও বিলের বিরোধিতা করে “পারকাটি ঔরতোঁ” (ছোট চুলওয়ালা নারী) মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। পরে নীতীশ কুমার তাঁকে বোঝান যে, বিলটি প্রথমে পাশ করা উচিত, পরে সংরক্ষণের মধ্যে সংরক্ষণের দাবি তোলা যেতে পারে। পরবর্তীতে পঞ্চায়েতে নারীদের জন্য ৫০% এবং সরকারি চাকরিতে ৩৫% সংরক্ষণের মাধ্যমে নীতীশ কুমার নারী রাজনীতির ক্ষেত্রেই বিপ্লব ঘটান।

‘সাইকেল যোজনা’, ‘জীবিকা’ প্রকল্প, ও স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে নীতীশ কুমার রাজ্যে নারীদের একটি দৃঢ় ভোটব্যাঙ্ক গড়ে তুলেছেন।

অন্যদিকে, তেজস্বী যাদব জীবিকা কর্মীদের স্থায়ী চাকরি, মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, এবং নারীদের জন্য বাড়ি, রেশন ও আয়ের নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ — অতীতের ছায়া থেকে মুক্ত হয়ে নারীদের আস্থা অর্জন করা।

এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৪ নভেম্বরের ভোটের মাধ্যমে নারীরা কি আবারও নীতীশের পাশে থাকবেন, না কি নতুন প্রজন্মের নেতা তেজস্বীর প্রতি আস্থা রাখবেন?