হায়দ্রাবাদ/ভুবনেশ্বর, ২৮ অক্টোবর : বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন মন্থা সোমবার গভীর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে, যা অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে কাকিনাদার কাছাকাছি স্থলভাগে আছড়ে পড়তে প্রস্তুত। এর বাতাসের গতি ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে, ফলে ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে উপকূলীয় এলাকায়।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে যে সাইক্লোন মন্থা সোমবার সকালে মাচিলিপটনাম থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং বিশাখাপত্তনম থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আজ সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে মাচিলিপটনাম ও কালিঙ্গাপাটনমের মধ্যবর্তী এলাকায় স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে।
অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলির মধ্যে কাকিনাদা, চিত্তোর এবং তিরুপতিতে ইতিমধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়া চলছে। চিত্তোর জেলার নাগরি আসনে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুশাস্থলি নদীর পানি উপচে পড়ে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কাকিনাদা জেলায় উপকূলীয় এলাকাগুলিতে সমুদ্রের ঢেউ ভূমির দিকে প্রবাহিত হওয়ায় উপকূলীয় ক্ষয়ও বেড়েছে।
সাইক্লোনের প্রভাব অন্ধ্রপ্রদেশের বাইরে ওড়িশাতেও পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ওড়িশার ৮টি জেলার জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, সেগুলি হল মালকানগিরি, কোরাপুট, নবরঙ্গপুর, রায়গড়, গজপতি, গঞ্জাম, কালাহান্ডি ও কন্ধামাল। সাইক্লোনের কারণে এসব অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া আসতে পারে।
ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে ১,৪৪৫টি সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং ১২০টি উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রায় ৩২,০০০ মানুষকে নিরাপদে সরানো হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে মঙ্গলবার থেকে ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সাইক্লোন মন্থার প্রভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ সতর্কতা জারি করেছে।
তামিলনাড়ুর কিছু উত্তরাঞ্চলীয় জেলা যেমন চেন্নাই, তিরুভাল্লুর, কানচিপুরমে সোমবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে যে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিমান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে। ভিষাখাপত্তনম ও চেন্নাইয়ের মধ্যে ৬টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও বেশ কিছু ট্রেন বাতিল বা সংক্ষিপ্ত পথের মাধ্যমে চলাচল করছে।
সরকারি সংস্থাগুলি সতর্কতা অবলম্বন করে এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে, যাতে কোনও ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়।

