৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, কারাবন্দিদের অধিকার নিয়ে বিশেষ আলোচনার আয়োজন

নয়াদিল্লি, ১২ অক্টোবর : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ৩২তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আজ এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনএইচআরসি-র চেয়ারপার্সন ন্যায়মূর্তি ভি. রামাসুব্রহ্মণিয়ান, সদস্য বিচারপতি (ডঃ) বিদ্যুৎ রঞ্জন সারঙ্গী, বিজয়া ভারতী সায়নি এবং প্রিয়াঙ্ক কনুঙ্গো।

এই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে কারাবন্দিদের মানবাধিকার ও কল্যাণ নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে কারাবন্দিদের মর্যাদা, অধিকার ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব ভারত লাল এবং কমিশনের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তারা কমিশনের ৩২ বছরের যাত্রাপথে প্রাপ্তি ও চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেন এবং দেশের মানবাধিকারের সুরক্ষায় কমিশনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

এই প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়, রাজ্য সরকার, কূটনীতিক, আইন বিশেষজ্ঞ, গবেষক, একাডেমিসিয়ান, সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

১৯৯৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত এনএইচআরসি বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নীতিগত সংস্কার, প্রশাসনে স্বচ্ছতা এবং আইন প্রয়োগে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৩.৭৯ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে, যার মধ্যে ২,৯৮১টি মামলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করেছে। এছাড়াও, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ৮,৯২৪টি মামলায় মোট ২৬৩ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশন এ পর্যন্ত ৩১টি পরামর্শ জারি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শিশুপর্নোগ্রাফি, বিধবা নারীর অধিকার, ভিক্ষুকদের অধিকার, খাদ্য ও স্বাস্থ্য অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের অধিকার, মৃতদেহের মর্যাদা, ট্রাকচালকদের সুরক্ষা, রূপান্তরকামীদের কল্যাণ এবং কারাবন্দিদের আত্মহত্যা প্রতিরোধের মতো বিষয়।

২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশন মোট ৭৩,৮৪৯টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং ১০৮টি মামলা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করেছে। এই সময়কালে ৬৩টি স্থল পরিদর্শন ও ৩৮,০৬৩টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ২১০টি মামলায় মোট ৯ কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া ওডিশা ও তেলেঙ্গানায় দুটি ‘ওপেন হিয়ারিং এবং ক্যাম্প সিটিং’ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা নিষ্পত্তি ও ক্ষতিপূরণ সুপারিশ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে জবাবদিহিতা বাড়াতে এবং স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপের পথ খুলে দিয়েছে।

কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ভবিষ্যতেও মানবাধিকারের সুরক্ষায় আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাবে।