পটনা, ১৬ অক্টোবর: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার মনোনয়নের সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র ৩১ ঘণ্টা বাকি। এর মধ্যেই বিরোধী জোট মহাগঠবন্ধনের ভিত নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। বিকাশশীল ইনসান পার্টির প্রধান মুকেশ সাহানি আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত চাপ তৈরি করেছেন। সূত্রের খবর, তিনি অন্তত ২৪টি আসনের দাবি জানিয়েছেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন তাঁকে ১৫টির বেশি দিতে নারাজ। তেজস্বী যাদব সাহানিকে ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। মহাগঠবন্ধন স্পষ্ট করে দিয়েছে, এর থেকে বেশি কিছু সম্ভব নয়। সাহানি যদি দাবি থেকে সরে আসেন, তাহলে আসন সমঝোতা হতে পারে; নইলে ভিআইপি-র জোট ছাড়ার সম্ভাবনা প্রবল।
২০১৮ সালে গঠিত সাহানির দল মূলত বিহারের মৎস্যজীবী ও নৌকা চালক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভাব রাখে। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুরুতে মহাগঠবন্ধনে থাকলেও পরে আসন নিয়ে বিরোধের জেরে তিনি এনডিএ-তে চলে যান এবং ১১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪টি জয় পেয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে দলের তিন বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দেন ও একজন মারা যান। এরপর সাহানি এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। এবার ফের মহাগঠবন্ধনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলেও উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবিতে জোটে অস্বস্তি তৈরি করেছেন। সাহানি বলেন, “তেজস্বী যদি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, আমি কেন উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারব না?”
এই রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ তাদের দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকায় চারজন মুসলিম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। গতবারের তুলনায় সংখ্যাটি কম (২০২০-এ ছিল ১০ জন), তবে সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতেই এই পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রার্থীরা হলেন—জামা খান (চেইনপুর), সাবা জাফর (আমৌর), মঞ্জার আলম (জোখিহাট), ও শাগুপ্তা আজিম (আরারিয়া)। এই চারটি আসনের মধ্যে তিনটিই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সীমাঞ্চল অঞ্চলের, যেখানে রাজ্যের প্রায় ১৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা বসবাস করেন।
জেডিইউ এ পর্যন্ত তাদের মোট ১০১টি আসনের মধ্যে দুই দফায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ৫৭ জনের প্রথম তালিকার পর আজ ৪৪ জনের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে ৩৭ জন ওবিসি, ২২ জন ইবিসি, ২২ জন সাধারণ শ্রেণির, ১৫ জন তফসিলি জাতি, ১ জন তফসিলি জনজাতি, ১৩ জন নারী, ৫ জন বর্তমান মন্ত্রী ও ৩ জন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন।
অন্যদিকে, এনডিএ-র আসন সমঝোতা অনুযায়ী বিজেপি ও জেডিইউ ১০১টি করে আসনে লড়বে। বাকিগুলি ছোট দলের মধ্যে ভাগ হয়েছে। উপেন্দ্র কুশওহার রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা ও জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা ৬টি করে আসন পেয়েছে, এবং চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি পেয়েছে ২৯টি আসন। মাঝি ইতিমধ্যেই তাঁর দলের ছয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। চিরাগ পাসওয়ান ১৭ জনের নাম প্রকাশ করেছেন এবং বাকি ১২টির তালিকা আসতে বাকি। কুশওহার দল ৪ জনের নাম ঘোষণা করেছে।
সব মিলিয়ে, মহাগঠবন্ধনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে অনিশ্চয়তা, জোটের ভাঙন, সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণ এবং এনডিএ-র চূড়ান্ত কৌশল—সবকিছু মিলিয়ে বিহারের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা ও টানটান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

