বিহার বিধানসভা নির্বাচন: মনোনয়ন পর্ব শুরু, এনডিএ ও গ্র্যান্ড আলায়েন্সের আসন ভাগাভাগিতে টানাপোড়েন, নজরে নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারি

পাটনা, ১৫ অক্টোবর: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, তবে এনডিএ ও গ্র্যান্ড আলায়েন্স — দুই প্রধান জোটের মধ্যেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এনডিএ-তে বিশেষ করে জেডিইউ ও এলজেপি (রামবিলাস)-এর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় জেডিইউ এখনও সব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। অন্যদিকে, গ্র্যান্ড আলায়েন্সেও কংগ্রেসের কিছু আসন না ছাড়ার প্রবণতায় জোটসঙ্গীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যার ফলে একাধিক আসনে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার প্রধান জিতন রাম মাঞ্জি ঘোষণা করেছেন, তাদের দল বোধগয়া ও মখদুমপুর আসনে প্রার্থী দেবে, যদিও সেই আসনগুলি বরাদ্দ হয়েছে এলজেপি (রামবিলাস)-এর জন্য। এই পরিস্থিতিতে জেডিইউ ও এলজেপি-র মধ্যে টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই জেডিইউ নেতা বিজেন্দ্রপ্রসাদ যাদব ও প্রাক্তন বিধায়ক অনন্ত সিং মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

গতকাল বিজেপি ৭১ জন প্রার্থীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে ৫০ জন বর্তমান বিধায়ক রয়েছেন, এবং উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীর নামও রয়েছে। এনডিএর অংশীদার এইচএএম তাদের ছয়টি বরাদ্দকৃত আসনের প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেছে। জেডিইউ আজ তাদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে ৫৭ জন প্রার্থীর নাম রয়েছে, যার মধ্যে চিরাগ পাসওয়ানের দাবি করা চারটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি।

জেডিইউ-র গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন — সোনবরসা থেকে রতনেশ সাদা, মোরবা থেকে বিদ্যাসাগর নিশাদ, একমা থেকে ধুমাল সিং, এবং রাজগীর থেকে কৌশল কিশোর। এছাড়া, মন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরী (সরাই রঞ্জন), নরেন্দ্র নারায়ণ যাদব (আলমনগর), নিরঞ্জন কুমার মেহতা (বিহারিগঞ্জ), রমেশ রিষি দেব (সিংহেশ্বর), কবিতা সাহা (মধেপুরা), গনদেশ্বর শাহ (মহিসি), অতিরেক কুমার (কুশেশ্বরস্থান)-এর নামও তালিকায় রয়েছে।

অন্যদিকে, গ্র্যান্ড আলায়েন্সের প্রার্থী তালিকা আজ পাটনায় চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির দীর্ঘ বৈঠকে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। কংগ্রেসের বিধানসভার দলনেতা শাকিল আহমেদ খান জানিয়েছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিকভাবে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সিপিআই(এমএল) আরা, অরওয়াল, পালিগঞ্জ ও জিরাদেই-সহ বেশ কয়েকটি আসন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। সিপিআই ছয়টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে এবং বিএসপি ইতিমধ্যেই তাদের ৪০ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে।

নির্বাচনের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘মেরা বুথ সবসে মজবুত’ কর্মসূচির আওতায় বিহারের বুথস্তরের দলের কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হবেন। তিনি দলের কর্মীদের সমন্বিত প্রচারের ডাক দেবেন, যাতে এনডিএ আবারও রাজ্যে জয়লাভ করতে পারে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে টাকার প্রভাব রুখতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে। রাজ্য পুলিশ, আবগারি দফতর, আয়কর বিভাগ, ডিআরআই, কাস্টমস ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। ৬ অক্টোবর নির্বাচনের ঘোষণা পর থেকে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার নগদ, মদ, মাদক ও উপহারসামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে, ফ্লাইং স্কোয়াড, সার্ভেইলেন্স টিম ও ভিডিও টিম ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় থাকবে, যাতে ভোটারদের প্রভাবিত করতে কোনও আর্থিক প্রলোভন বা অনৈতিক কার্যকলাপ রোধ করা যায়। সাধারণ মানুষও সি-ভিজিল অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন জোর দিয়ে বলেছে, কোনও সাধারণ নাগরিক যেন এই তল্লাশির সময় হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

উল্লেখ্য, বিহারে ২৪৩টি আসনে নির্বাচন ৬ ও ১১ নভেম্বর, দুই দফায় অনুষ্ঠিত হবে, এবং ফলাফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর। পাশাপাশি, বিজেপি জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং তেলেঙ্গানার আসন্ন উপনির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে বুদগাম থেকে আগা সৈয়দ মহসিন এবং নাগরোটা থেকে দেবযানী রানা, ঝাড়খণ্ডে ঘাটশিলায় বাবুলাল সোরেন, ওড়িশার নুয়াপাড়ায় জয় ঢোলাকিয়া এবং তেলেঙ্গানার জুবিলি হিলস থেকে লঙ্কালা দীপক রেড্ডি বিজেপির প্রার্থী হবেন।

বিহার নির্বাচনের দিকে সারা দেশের নজর থাকলেও, আসন ভাগাভাগি, প্রার্থী বাছাই এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরেই অনেকটা নির্ভর করছে এবারের রাজনৈতিক সমীকরণ।