শর্ম আল-শেখে গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দিলেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী — রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট, কার সঙ্গে দেখা করতে অনীহা?

শর্ম আল-শেখ , ১৩ অক্টোবর — মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সহ-আয়োজিত গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তি চুক্তির উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর পরিবর্তে, মন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই সম্মেলনে, যেখানে ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রনেতারা একত্র হয়েছেন।

এই অনুপস্থিতি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা — কেন মোদী উপস্থিত থাকলেন না, কাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়িয়ে গেলেন?

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এর জবাবে ভারত চালায় ‘অপারেশন সিন্দুর’, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা চরমে ওঠে।

ভারত একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয় — ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করে, বন্ধ করে দেয় আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পথ। এর পরপরই, প্রধানমন্ত্রী মোদী সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের চীন সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে “সন্ত্রাসবাদকে মদতদাতা দেশ” হিসেবে কটাক্ষ করেন, যদিও কোনও দেশের নাম মুখে আনেননি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে শর্ম আল-শেখ সম্মেলনে শাহবাজ শরিফের উপস্থিতির সম্ভাবনা থাকায়, মোদীর অনুপস্থিতি অনেকের মতে কৌশলগতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ না করার সিদ্ধান্ত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৫০% হারে শুল্ক চাপিয়েছেন, যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক টানাপোড়েন চরমে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা অব্যাহত রাখাকেই দায়ী করেছে ওয়াশিংটন।

ভারতের যুক্তি — ১৪০ কোটির জনসংখ্যার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি অপরিহার্য। তবুও, মার্কিন প্রশাসন শুল্ক আরোপে অনড়।

ট্যারিফ ইস্যুর পাশাপাশি, ট্রাম্প বারংবার দাবি করে চলেছেন যে তাঁর চাপেই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো গিয়েছে। তিনি বলেন, “আমার হস্তক্ষেপ ছাড়া, অন্তত সাতটি যুদ্ধ এখনো জ্বলন্ত হত — তার মধ্যে একটি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে।”

ভারত এই দাবিকে বারংবার নাকচ করে বলেছে, যুদ্ধবিরতি শুধুই দুই দেশের সামরিক কর্তাদের সরাসরি আলোচনার ফসল।

এর আগেও, কানাডায় G7 সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় ট্রাম্প মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আমেরিকায় এক স্টপওভার বৈঠকের জন্য। কিন্তু মোদী সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন — যা এক বিরল কূটনৈতিক বার্তা। সেই সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ছিলেন ওয়াশিংটনে সফরে, ফলে ভারত চায়নি এমন কোনও ছবি তৈরি হোক, যেখানে আবারও ট্রাম্প নিজেকে “মধ্যস্থতা”র দাবিদার হিসেবে তুলে ধরেন।

গত মাসে ট্রাম্পের ৭৫তম জন্মদিনে মোদী ফোন করে শুভেচ্ছা জানান, দু’পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ও গাজা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কথাও হয়। কিন্তু তবুও, সাম্প্রতিক শুল্ক ও ‘মধ্যস্থতা’ ইস্যুতে ভারতের আস্থাহীনতা যে রয়েই গেছে, মোদীর এই সফর বাতিল তারই প্রতিফলন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শর্ম আল-শেখে মোদীর অনুপস্থিতি ট্রাম্পকে আরেকবার “ভারত-পাকিস্তান সমঝোতা”র দাবিদার হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করল। একই সঙ্গে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং গাজা ইস্যুতে ভারতের স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রাখতেই এই কৌশল।

কূটনৈতিক মহলে বার্তাটা স্পষ্ট — গাজা শান্তি পরিকল্পনা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, মোদী সরকার চায় না এমন কোনও আন্তর্জাতিক ছবি তৈরি হোক যেখানে ভারত আবারও কোনও “মধ্যস্থতার” গল্পের অংশ হয়। পাকিস্তান এবং আমেরিকা — এই দুই ফ্যাক্টরের ভারসাম্য রক্ষার খেলায় মোদী এইবার নিজের উপস্থিতিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেন।