ভারত মোবাইল কংগ্রেস ২০২৫ সফলভাবে সম্পন্ন, প্রদর্শিত হলো দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি

নয়াদিল্লি, ১২ অক্টোবর — নয়াদিল্লির যশোভূমি কনভেনশন সেন্টারে চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হওয়া ভারত মোবাইল কংগ্রেস ২০২৫-এর সফল সমাপ্তি ঘটল ১১ অক্টোবর। ৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই মেগা ইভেন্টটি ছিল এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী টেলিকম ও প্রযুক্তি ফোরামের বৃহত্তম সংস্করণ। এবারের কংগ্রেসে বিশ্বজুড়ের প্রযুক্তিবিদ, শিল্পনেতা, স্টার্টআপ, নীতিনির্ধারক ও গবেষকরা একত্রিত হয়ে ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গঠনে আলোচনা ও সহযোগিতার পথ খোঁজেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আজ আত্মনির্ভর ভারত ও মেক ইন ইন্ডিয়া-র মতো উদ্যোগের ফলে ভারত প্রযুক্তিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।” তিনি দেশীয় উৎপাদন, সেমিকন্ডাক্টর, মোবাইল প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এটাই সেরা সময়—বিনিয়োগ করুন, উদ্ভাবন করুন এবং ভারতে মেক ইন করুন৷”

যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, গত ১১ বছরে ভারত প্রযুক্তি গ্রহণকারী দেশ থেকে বিশ্বের ডিজিটাল নেতা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ভারতে ১.২ বিলিয়ন মোবাইল গ্রাহক এবং ৯৪৪ মিলিয়ন ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী রয়েছে, যেখানে ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ মিলিয়ন। তিনি আরও জানান, মোবাইল ডেটার খরচ ৯৮ শতাংশ কমে গেছে এবং ভারত গড়ে তুলেছে বিশ্বের বৃহত্তম “ডিজিটাল হাইওয়ে”, যা কোটি কোটি মানুষকে সংযুক্ত করেছে।

আইএমসি ২০২৫-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভারতের প্রথম স্যাটকম সামিট, যার প্রতিপাদ্য ছিল “স্পেস নেটওয়ার্কস ফর ইউনিভার্সাল কানেক্টিভিটি ।” শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সিন্ধিয়া বলেন, “স্যাটকম মানে প্রত্যন্ত গ্রামে শিক্ষক এবং প্রতিটি বাড়িতে চিকিৎসকের সুবিধা। ভারতের মতো দেশে এর প্রয়োগ দারুণ সম্ভাবনাময়।” তিনি ইসরো-এর নিসার মিশন-এর উল্লেখ করে বলেন, ভারত এখন শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করছে না, বরং নিজেই উদ্ভাবন করছে।

৬জি প্রযুক্তির দিকেও ভারত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আইএমসি-র পাশাপাশি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ভারত 6জি সিম্পোজিয়াম 2025-এ বিশ্বজুড়ের ৬জি গবেষণা সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে ভবিষ্যতের ৬জি প্রযুক্তি নকশার জন্য ‘বিশ্বস্ত, নিরাপদ, টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আন্তঃসংযোগযোগ্য’ নীতিমালা প্রস্তাব করা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভারতে ইতোমধ্যেই ৬৫ মিলিয়নের বেশি ৫জি ব্যবহারকারী রয়েছে এবং এখন মূল লক্ষ্য হল পরিষেবার ব্যবহার বৃদ্ধি ও ৬জি কাঠামোর উন্নয়ন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের উদ্ভাবন তুলে ধরে। মিডিয়াটেক প্রদর্শন করে তাদের নতুন ডাইমেনসিটি 9500 চিপসেট, যা উন্নত এআই, গেমিং ও পাওয়ার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের ৫জি স্মার্টফোনকে এগিয়ে নেবে। তেজস নেটওয়ার্ক তাদের দেশীয়ভাবে তৈরি ডাইরেক্ট-টু-মোবাইল প্রযুক্তি উপস্থাপন করে, যা ৮ বছর গবেষণা ও পরীক্ষার পর প্রস্তুত। বিএসএনএল জানায়, তাদের ৫জি পাইলট প্রকল্প সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং ৪জি আপগ্রেডের কাজ চলছে।

স্যাটকম খাতে স্পষ্ট নীতিমালা গঠনে এগোচ্ছে সরকার। ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনের সচিব নীরজ মিত্তাল জানান, স্যাটেলাইট পরিষেবার জন্য লাইসেন্সিং, মূল্য নির্ধারণ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। ইসরো চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে ভারত উৎক্ষেপণ ক্ষমতা, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক মিশনে উন্নত দেশগুলোর সমতুল্য হতে চায়।

সব মিলিয়ে, ভারত মোবাইল কংগ্রেস ২০২৫ ছিল ভারতের প্রযুক্তিগত বিকাশ, দেশীয় উদ্ভাবন এবং বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল নেতৃত্বের এক জ্বলন্ত প্রমাণ। ৫জি থেকে শুরু করে ৬জি, স্যাটকম থেকে সেমিকন্ডাক্টর—আইএমসি ২০২৫ ভারতের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার এক বিশাল মঞ্চ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকল।