চিরাগ পাসওয়ান-প্রশান্ত কিশোর জোট? আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিজেপির কৌশলী নীরবতা

নয়াদিল্লি, ৭ অক্টোবর : আগামী মাসের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ময়দানে এক নতুন মোড়—লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি)-র প্রধান চিরাগ পাসওয়ান ও নির্বাচনী কৌশলবিদ তথা রাজনীতিবিদ প্রশান্ত কিশোরের সম্ভাব্য জোট নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। এলজেপি সূত্র মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমকে-কে জানিয়েছে, “রাজনীতিতে দরজা সবসময় খোলা থাকে।”

বিহারে বিজেপির সঙ্গে এলজেপির আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও আলোচনা শুরু না হওয়ায়, চিরাগ পাসওয়ান বিকল্প পথ খুঁজতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, পাসওয়ান চান ২৪৩টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসন, বিশেষ করে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে ১০০% সাফল্যের (৫টির মধ্যে ৫টি আসন জয়) পর তার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি তাকে মাত্র ২৫টি আসন দিতে প্রস্তুত।

এ অবস্থায়, প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ দলের সঙ্গে সম্ভাব্য জোট চিরাগের হাতে আরও বেশি আসনে লড়ার সুযোগ এনে দিতে পারে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা সম্ভাব্য হলেও খুব একটা সম্ভাবনাময় নয়। কারণ, কিশোর এখনও নির্বাচনে অভিষেক করেননি এবং মুখ্যমন্ত্রী পদে চিরাগের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে এটি তেমন সাহায্য করবে না।

এদিকে, বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২টি আসন। বিজেপি, নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ), এবং বিরোধী পক্ষের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর মতো শক্তিশালী দলের সামনে এলজেপি-জন সুরাজ জোটের পক্ষে সেই লক্ষ্য অর্জন খুব কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে, প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের গুঞ্জন বিজেপির ওপর চাপ তৈরির একটি কৌশল হতে পারে বলে মনে করছে এলজেপি। এলজেপি দাবি করছে, তারা শুধুমাত্র আসনের সংখ্যা নয়, মানসম্মত আসন চায়। গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে পাসওয়ান বলেছিলেন, “আমি মানসম্পন্ন আসন চাই, কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে বলা ঠিক নয়। জোট ধর্ম রক্ষা করা উচিত।”

রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় এসেছে চিরাগের একটি মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেন, “আমি তরকারির নুনের মতো… প্রতিটি আসনে ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোট প্রভাবিত করতে পারি।” তিনি স্পষ্ট করে দেন, এখনও জোটে রয়েছেন, তবে “প্রয়োজনে বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্পও আছে।”

বিজেপি অবশ্য এই মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলীয় সূত্রের মতে, চিরাগ এখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ এবং তার অবস্থান এলজেপির কট্টরপন্থীদের সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে।

এদিকে, এলজেপি সূত্রে দাবি, বিজেপি ও জেডিইউ যদি ২০০টি আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়, তবে তা নিয়ে কোনও সরকারি ঘোষণা হয়নি। তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, আসন নিয়ে আলোচনা শুধুমাত্র বিজেপির সঙ্গেই হবে, জেডিইউ-র সঙ্গে নয়—যা আবার নীতীশ কুমারের দলের সঙ্গে টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দেয়।

তবে এই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার বাইরেও চিরাগ পাসওয়ানের একটি লক্ষ্য সুস্পষ্ট—তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ চান। আজ সকালে এলজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টারে লিখেছে, “অবকি বার, যুব বিহারি”—যা তার সেই আকাঙ্ক্ষাকে আরও জোরালো করে তোলে।