উত্তরবঙ্গে বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওরাঁও-এর উপর হামলা, তৃণমূলের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ – পাল্টা অস্বীকার শাসক দলের

শিলিগুড়ি, ৭ অক্টোবর:বিজেপি বিধায়ক মনোজ কুমার ওরাঁও-এর উপর হামলার ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হলো পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গন। সোমবার জলপাইগুড়ির নাগরকাটা এলাকায় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর পাথর ছোড়ার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার এই হামলার ঘটনা ঘটলো।

মনোজ ওরাঁও জানিয়েছেন, তিনি বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলে হঠাৎ করে একটি দল তাঁকে ঘিরে ধরে আক্রমণ করে। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তিনি বলেন, “এই হচ্ছে তৃণমূল শাসিত বাংলার গণতন্ত্রের অবস্থা। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে গেলেও আক্রমণের শিকার হচ্ছি।”

তবে তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, “প্রথমে মনোজ ওরাঁও নিজেই একজন বয়স্ক মানুষকে মারধর করেছিলেন। এই ঘটনার পরেই উত্তেজনা ছড়ায়।”

এই ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। দলীয়ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,”উত্তরবঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ালেই তৃণমূল আক্রমণ করে! এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনের নমুনা। মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেন আজ বাংলায় অপরাধ হয়ে গেছে!”

বিজেপির তরফে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, আহত মনোজ ওরাঁও-কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলি পড়ে আছে।

আরও এক বিবৃতিতে বিজেপি জানায়,”তৃণমূলের কাছে মানবতা বলে কিছু নেই, আছে শুধু সন্ত্রাস, মিথ্যা ও ঘৃণার রাজনীতি। যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত, তখন তৃণমূল কেবল হিংসা ছড়াতে ব্যস্ত।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,”আমাদের সাংসদ ও বিধায়কদের এইভাবে আক্রান্ত হওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত বেহাল অবস্থাকে সামনে আনছে।”তিনি রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।

ঘটনার পর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি সাংসদ খগেন মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং মুর্মুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওনার ব্লাড সুগার বেড়ে গিয়েছে, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমি ওনাকে শুভেচ্ছা ও সুস্থতা কামনা করেছি।”

প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিং জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ নিখোঁজ। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারের তরফে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চলছে।

এই ঘটনার পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও রাজনৈতিক হিংসা ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, বিজেপি এই দুর্যোগকে “পলিটিক্যাল ফটো অপ” বানিয়ে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী কয়েকদিন উত্তরবঙ্গের রাজনীতি যে আরও সরগরম হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।