আত্মনির্ভর ভারতের পথে মোদী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি : স্বদেশী থেকে অন্ত্যোদয় পর্যন্ত যাত্রা

নয়াদিল্লি, ২৯ সেপ্টেম্বর : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে আত্মনির্ভর ভারত–এর ডাক দিয়েছেন, তার মূল উদ্দেশ্য কেবল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে দেশীয় সক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি উন্নয়নের পথকে সামাজিক ন্যায় ও অন্ত্যোদয়ের দর্শনের সঙ্গে যুক্ত করা। মহাত্মা গান্ধীর ‘স্বদেশী’ আহ্বান এবং পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ‘অন্ত্যোদয়’–এর ভাবনা এই যাত্রায় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত।

গত এক দশকে গরিব, কৃষক, প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী কর সংস্কার থেকে শুরু করে জিএসটি প্রবর্তন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস–এর উন্নতি, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারত যেখানে ছিল ১৯০ দেশের মধ্যে ১৪২ তম স্থানে, সেখানে ২০২০ সালে তা উন্নীত হয়ে ৬৩ তম স্থানে পৌঁছায়। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে এবং শিল্পের গতিও ত্বরান্বিত হয়েছে।

মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগে মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল ও প্রতিরক্ষা খাতে বড় বিনিয়োগ এসেছে। ২০১৪ সালে যেখানে মোবাইল নির্মাণ প্রায় ছিল না, আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল নির্মাতা। অ্যাপল, স্যামসাং ও শাওমি–র মতো সংস্থাগুলি ভারতে উৎপাদন করছে। ২০২৩-২৪ সালে মোবাইল রফতানি ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং ২০২৪-২৫ সালে তা ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার উদাহরণ আরও দৃঢ়। ২০১৪ পর্যন্ত ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক ছিল, অথচ ২০২৩-২৪ সালে প্রতিরক্ষা রফতানি বেড়ে দাঁড়ায় ২১,০০০ কোটি টাকা। দেশীয় তেজস যুদ্ধবিমান, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ও পিনাকা রকেট লঞ্চার এখন ভারতের শক্তির প্রতীক। কোচি শিপইয়ার্ডে দেশীয় বিমানবাহী রণতরী INS বিক্রান্ত নির্মাণ এই সাফল্যের প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রী মোদী আত্মনির্ভর ভারতকে অন্ত্যোদয়ের দর্শনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। জনধন যোজনার মাধ্যমে ৫৫ কোটিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, উজ্ব্বলা যোজনায় ১০.৩৩ কোটি মহিলাকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, আর পিএম স্বনিধি প্রকল্পে লক্ষাধিক ছোট ব্যবসায়ীকে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। গতি শক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ ও ছোট শহরেও উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের পণ্য রফতানি ৪৫১.০৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ফার্মা সেক্টরে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং টিকা সরবরাহকারী দেশ। স্টার্টআপ ইন্ডিয়া উদ্যোগে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ইউপিআই-এর সাফল্যও এই অগ্রগতিকে আরও জোরদার করেছে।

সব মিলিয়ে, মোদী সরকারের আত্মনির্ভর ভারত কেবল অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক নয়, বরং সামাজিক ন্যায়, অন্ত্যোদয় এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ভারতের নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। মেক ইন ইন্ডিয়া থেকে INS বিক্রান্ত, সেমিকন্ডাক্টর মিশন থেকে উজ্ব্বলা ও জনধন যোজনা—প্রতিটি পদক্ষেপ ভারতকে নির্ভরতা থেকে শক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।