লেহ, ২৯ সেপ্টেম্বর : লাদাখ রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের জেরে গ্রেপ্তার হওয়া জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুককে ‘দেশবিরোধী’ বলে অভিযুক্ত করার ঘটনায় মুখ খুললেন তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো। সোমবার তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দুটি ছবি শেয়ার করেন—একটিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ, আর অন্যটিতে ইউনুসের সঙ্গে ওয়াংচুকের দেখা করার মুহূর্ত।
আংমো লিখেছেন, “যদি সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য ইউনুসের সঙ্গে দেখা করা ঠিক হয়, তবে ভারতের একজন শিক্ষাবিদ ও উদ্ভাবক সোনম ওয়াংচুকের পক্ষে তাঁর সঙ্গে দেখা করা সমস্যা কোথায়?”
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে দাবি উঠেছে যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পেছনে যাঁরা ছিলেন, ওয়াংচুক তাঁদের সঙ্গেই আঁতাত করেছেন। নিরাপত্তা সংস্থার অভিযোগ, গত ২৪ সেপ্টেম্বর লেহ-তে বিক্ষোভে চারজনের মৃত্যু ও প্রায় ৯০ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় ওয়াংচুক নেপাল ও বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের উদাহরণ টেনে প্রতিবাদীদের উসকানি দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA) অনুযায়ী যোধপুর কারাগারে বন্দি আছেন, যেখানে বিচার ছাড়াই এক বছর পর্যন্ত আটক রাখা যায়।
লেহতে কারফিউ জারি থাকলেও পরিস্থিতি শান্ত হলেও অশান্তির আশঙ্কা বিরাজ করছে।
আংমো, যিনি নিজেও শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী, শুরু থেকেই অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর দাবি, ওয়াংচুকের বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর আগেও তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিজের যুক্তিতে টেনেছেন। রবিবার তিনি এক পোস্টে প্রশ্ন তুলেছিলেন, “ভারত যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে পারে, তবে জাতিসংঘের একটি জলবায়ু সম্মেলনে পাকিস্তানে আমন্ত্রিত হওয়া কেন প্রশ্নবিদ্ধ?”
তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে জাতিসংঘ ও Dawn মিডিয়া গ্রুপের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ওয়াংচুক প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রশংসা করেছিলেন। অথচ লাদাখ পুলিশের প্রধান এস.ডি. সিং জামওয়াল সেই ঘটনাকে পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য যোগ হিসেবে দেখিয়েছেন।
সোমবারের পোস্টে ব্যবহৃত ছবি দুটি ভিন্ন সময়ের। ইউনুসের সঙ্গে ওয়াংচুকের ছবি ২০২০ সালে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক অনুষ্ঠানে তোলা, যা তিনি নিজেই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। সেই সময় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। অন্যদিকে, ইউনুসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির ছবি ২০২৫ সালের এপ্রিলে ব্যাংককে এক সম্মেলনের সময় তোলা। পরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর জানান, ওই বৈঠকে ভারত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ ও ঢাকার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের জেরে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনুস অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর থেকেই ভারতের সমালোচনা, বিশেষত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

