কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর : কলকাতার সান্তোষ মিত্র স্কোয়ারে ‘অপারেশন সিঁদুর ’ থিমে আয়োজিত দুর্গাপুজো নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পুজো বন্ধ করার চেষ্টা করার অভিযোগ এনে বলেন, “সান্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজো বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকার যেভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা একেবারেই চরম লজ্জাজনক।” উল্লেখ্য, এই পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মালব্য অভিযোগ করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার পরিকল্পিতভাবে দুর্গাপুজোয় বাধা দিচ্ছে। বিশেষ করে ‘অপারেশন সিঁদুর ’ নামক আলো-আলোচনা নির্ভর থিমকে কেন্দ্র করে পুলিশের অতিরিক্ত বিধিনিষেধ, ব্যারিকেড স্থাপন এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের নামে উৎসবের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। মালব্য আরও বলেন, “সরকারের এই পদক্ষেপ জাতীয় গর্বকে হরণ করার সামিল। এমন চলতে থাকলে পুজো উদ্যোক্তারা বাধ্য হবেন দশমীর আগেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে।” তিনি এটিকে “হিন্দু-বিরোধী কার্যকলাপ” আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন, এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে রাজ্য সরকারকে জনরোষের মুখোমুখি হতে হবে।
অন্যদিকে, অমিত শাহ উদ্বোধনী ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নের কথা বলেন এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি মা দুর্গার চরণে প্রার্থনা করেছি, যেন আগামী সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের মতো একটি সুরক্ষিত, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ বাংলা গড়ে তোলে।” পাশাপাশি, তিনি দুর্গাপুজোর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “নবরাত্রির এই উৎসব শুধু বাংলায় নয়, সারা ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদযাপিত হয়। এই পুজো আমাদের সংস্কৃতির অহংকার।”
এদিকে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্যান্ডেলের আয়োজকরা পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন। তাদের দাবি, পুলিশ অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে দর্শনার্থীদের চলাচলে বাধা দিচ্ছে, ফলে পুজোর মূল আকর্ষণ হারাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তবে কলকাতা পুলিশ এ সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে জানিয়েছে, কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি, শুধু উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শব্দসীমা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, “গতকাল দর্শনার্থীরা থেমে ২-৩ মিনিট ভিডিও দেখছিলেন, ফলে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছিল। সংগঠকদেরই উচিত অনুমোদিত ডেসিবেল সীমা মেনে চলা ও ভিড় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা।”
এই পরিস্থিতিতে, তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির অভিযোগকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলীয় মুখপাত্র ঋজু দত্ত বলেন, “যদি সরকার সত্যিই পুজো বন্ধ করতে চাইত, তাহলে অমিত শাহ কীভাবে এসে উদ্বোধন করলেন? বিজেপি একদিকে দাবি করে যে রাজ্য সরকার পুজো করতে দেয় না, অন্যদিকে তাদের শীর্ষ নেতা এসে উদ্বোধন করছেন। বাস্তবে, গতকাল লোকজন থেমে ভিডিও দেখছিলেন, যার ফলে সাময়িক ভিড়ের সমস্যা হয়েছে। যদি কিছু ঘটে যেত, দায় নিত কে?” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্গাপুজোর মতো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছে।”
এই বিতর্ক ইতিমধ্যেই পুজোর উল্লাসকে ছাপিয়ে রাজনৈতিক রঙ নিয়ে ফেলেছে। একদিকে বিজেপি মমতা সরকারকে হিন্দু-বিদ্বেষী আখ্যা দিচ্ছে, অন্যদিকে তৃণমূল বলছে বিজেপি এই উৎসবকে ব্যবহার করছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জন্য। সবমিলিয়ে, ‘অপারেশন সিঁদুর ’ এখন শুধু একটি থিম নয়, তা রাজ্যের শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সংঘর্ষের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

