কিয়েভ / নিউ ইয়র্ক, ২৪ সেপ্টেম্বর: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ভারত “মূলত আমাদের পক্ষেই রয়েছে।” ফক্স নিউজ-এ সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। এ বক্তব্য প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতিসংঘে দেয়া এক ঘণ্টাব্যাপী ভাষণের প্রেক্ষিতে আসে, যেখানে ট্রাম্প ভারত ও চীনকে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নের প্রধান উৎস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। জেলেনস্কি ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, “হ্যাঁ, আমাদের জ্বালানি নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে, তবে আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেগুলো সামলাতে পারবেন।”
জেলেনস্কি বলেন, ভারতকে রাশিয়ার জ্বালানি খাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা উচিত নয়, বরং ইউরোপের দেশগুলোকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, “আমরা চাই না ভারত পিছিয়ে যাক, বরং ইউরোপের দেশগুলোকে ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আশাবাদী যে ভবিষ্যতে ভারত তার অবস্থানে পরিবর্তন আনবে এবং রুশ জ্বালানি খাতে তাদের নির্ভরতা হ্রাস করবে।
সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের প্রসঙ্গও টানেন। তার ভাষায়, “ইরান কখনোই আমাদের পাশে থাকবে না, কারণ তারা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নয়।” এছাড়া, সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া একটি কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে জেলেনস্কি বলেন, “ট্রাম্প ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি ইউক্রেনকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করতে চান। আমরাও চাই যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক, এবং তিনিও সেটাই চান।”
জেলেনস্কি আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানেন যে তিনি জয়ী হচ্ছেন না, তবু বিশ্বের সামনে দাবি করছেন তিনি জিতবেন। ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা পিটার নাভারো এর আগে মন্তব্য করেছিলেন, “শান্তির পথ আংশিকভাবে নয়াদিল্লির মধ্য দিয়ে যায়”, এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে “মোদি’র যুদ্ধ” বলেও ব্যাখ্যা করেন। এই প্রসঙ্গে গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপের পর জেলেনস্কি বলেছিলেন, “আমরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর নির্ভর করছি।”
ভারত তাদের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট করেছে—রাশিয়া থেকে তেল কেনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন নয়। বরং পশ্চিমা দেশগুলো এখনও রাশিয়া থেকে বিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনে দিয়েছে। জাতীয় স্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই ভারতের প্রাথমিক লক্ষ্য বলে জানিয়েছে সরকার। এই প্রেক্ষাপটে, জেলেনস্কির মন্তব্য আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করল বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

