“ডিজিটাল অ্যারেস্ট” প্রতারণায় ২৩ কোটি টাকা খোয়ালেন দিল্লির প্রাক্তন ব্যাঙ্কার

নয়াদিল্লি, ২৩ সেপ্টেম্বর : দিল্লির এক প্রবীণ প্রাক্তন ব্যাঙ্কার এক মাসের মধ্যে “ডিজিটাল অ্যারেস্ট” প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় ২৩ কোটি টাকা হারিয়েছেন। এই চাঞ্চল্যকর প্রতারণার ঘটনায় হতভম্ব রাজধানীর পুলিশ মহল।

৭৮ বছর বয়সী নরেশ মালহোত্রা, যিনি দক্ষিণ দিল্লির গুলমোহর পার্ক এলাকার বাসিন্দা, আগস্ট মাসের শুরুতে একটি ফোন কল পান। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা এক মহিলা নিজেকে একটি টেলিকম সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁর মোবাইল নম্বর নাকি বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত।

এরপর একে একে মালহোত্রার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরিচয়ে আরও প্রতারক—কখনও মুম্বই পুলিশ, কখনও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, আবার কখনও সিবিআই-এর আধিকারিক সেজে। তাঁরা সকলেই মালহোত্রাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তাঁর নাম জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত এবং তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

প্রতারকরা দাবি করে, তাঁকে ‘সার্ভেইলেন্স’-এর অধীনে রাখা হয়েছে, ফলে তিনি বাড়ি ছাড়তে পারবেন না এবং প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর ভিডিও কলে অংশ নিতে হবে। এমনকি, তাঁকে একটি গোপনীয়তা চুক্তিপত্রে সইও করিয়ে নেওয়া হয়, যাতে তিনি এই বিষয়ে কাউকে কিছু না জানান।

প্রতারকরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য একটি ভুয়ো জামিনের কাগজপত্রও পাঠায় এবং হুমকি দেয়—তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হবে, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আসবে এবং পরিবারের উপর বিপদ আসতে পারে।

এইভাবে ৪ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, প্রতারকরা নরেশ মালহোত্রার তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ২০টি লেনদেনের মাধ্যমে ২৩ কোটি টাকা তুলে নেয়। এ সময় তাঁরা মালহোত্রার ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে।

এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির পর, মালহোত্রা অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হন। ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লি পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ফিউশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অপারেশনস ইউনিটে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মালহোত্রার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানান্তরিত প্রায় ২.৩ কোটি টাকার তহবিল ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে।

অন্যদিকে, মুম্বইয়ে এক চিকিৎসককে তাঁর মেয়ের এমবিবিএস কোর্সে ম্যানেজমেন্ট কোটার মাধ্যমে ভর্তি করানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে চারজনের বিরুদ্ধে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন দুই চিকিৎসকও।

পুলিশ জানিয়েছে, মুম্বইয়ের এক মিউনিসিপাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির নাম করে এই প্রতারণা করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশ সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে এবং অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোন কলে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বা আর্থিক বিবরণ শেয়ার না করার পরামর্শ দিয়েছে। এই ধরনের সন্দেহজনক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবিলম্বে স্থানীয় থানায় জানাতে বলা হয়েছে।