গুয়াহাটি, ২৩ সেপ্টেম্বর : অসম তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও মানবতাবাদী যুবেন গার্গের শেষকৃত্য আজ দুপুরে গুয়াহাটির উপকণ্ঠ সোনাপুরে সম্পন্ন হবে। সারা রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া। রাজ্যের হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে ওঠা এই সঙ্গীত শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এখন পর্যন্ত ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ভিড় জমিয়েছেন।
গুয়াহাটির অর্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সে তাঁর মরদেহ রাখা হয়েছে জনসাধারণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য, যেখানে ভিড় উপচে পড়ছে। শুধু অসম নয়, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে মানুষ ছুটে আসছেন তাঁদের প্রিয় “যুবেন দা”-কে শেষবারের মতো একবার দেখার আশায়।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, জনগণের একাংশের দাবির ভিত্তিতে আজ গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যুবেন গার্গের দেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। এই ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক ডুবে যাওয়ার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৫২ বছর বয়সী যুবেন গার্গ। তিনি সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব উৎসবে গান গাইতে গিয়েছিলেন। সেখানেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১৯৯২ সালে “অনামিকা” অ্যালবামের মাধ্যমে গানের জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন যুবেন গার্গ। পরে বলিউডে ২০০৬ সালের ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমার “ইয়া আলি” গানটির মাধ্যমে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেন। তবে কেবল একজন গায়ক হিসেবে নয়, তিনি ছিলেন একজন সুরকার, গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং একান্তভাবে সমাজসেবী।
তাঁর কণ্ঠে ৪০টিরও বেশি ভাষায় রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৩৮,০০০ গান — যা তাঁকে শুধুই একজন শিল্পী নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক চেতনায় এক অনন্য প্রতীক করে তুলেছে।
গানের বাইরে যুবেন গার্গ পরিচিত ছিলেন তাঁর সমাজসেবামূলক কাজের জন্য। শিক্ষাক্ষেত্র, গ্রামীণ স্বাস্থ্য ও অসমীয়া সংস্কৃতি রক্ষায় তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।
আজ যখন তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন, তখন স্পষ্ট — যুবেন গার্গ কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসমের আত্মা।
শেষকৃত্যের আগে আজ রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে শোকদিবস। সরকারি ভবনে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের তরফে অনুষ্ঠান বাতিল করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে যুবেন গার্গকে।

