প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতিতে পশ্চিমের ঝোঁক, বহু আগেই সেই পথে ভারত

নয়াদিল্লি, ২২ সেপ্টেম্বর : মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষ ও গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের পটভূমিতে, প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে একে একে হাঁটছে পশ্চিমা দেশগুলো। দীর্ঘদিন ধরে ইজরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল রবিবার একযোগে প্যালেস্টাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক পালাবদল হিসেবে দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ইজরায়েলের সামরিক অভিযান, হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু ও গাজা শহরের দুর্বিষহ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই পরিবর্তনকে সময়োপযোগী বলেও মনে করা হচ্ছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জুলাই মাসে প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রথম জি-৭ রাষ্ট্রনেতা হিসেবে নজির গড়েন। তিনি জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত এক বিশেষ সম্মেলনে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে। ইতিমধ্যে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, লাক্সেমবার্গ, মাল্টা, নিউজিল্যান্ড ও লিচেনস্টাইনের মতো দেশগুলিও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান আবারও সামনে এসেছে। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে প্যালেস্টাইনের বিভাজনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল ভারত। এরপর ১৯৭৪ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন–কে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৮৮ সালে স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বের প্রথমদিকের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়। যদিও ভারত ১৯৫০ সালে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ১৯৯২ সালে।

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যতিক্রমী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলাকে “সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ” বলে আখ্যা দেন এবং ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দেন। এর ফলে অনেকের কাছেই মনে হয়েছিল ভারত হয়তো তার ঐতিহ্যগত প্যালেস্টাইনপন্থী অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু পরবর্তীতে ভারত গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে জাতিসংঘে ভোট দিয়ে এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলে আবারও তার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই স্বীকৃতি প্রক্রিয়াকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একে “অবাস্তব” বলে অভিহিত করেন এবং জানান, জর্ডন নদীর পশ্চিমে কোনো প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে না। যুক্তরাষ্ট্র এই স্বীকৃতিকে “পারফর্মেটিভ” বা লোকদেখানো বলে উল্লেখ করেছে এবং হামাসকে পুরস্কৃত করার অভিযোগ তোলে।

বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪৫টি দেশ প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে জার্মানি, ইতালির মতো কিছু পশ্চিমা দেশ এখনো এই পথে হাঁটেনি। তবু আন্তর্জাতিক মহলে স্পষ্ট বার্তা উঠে এসেছে—দুই-রাষ্ট্র সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির অন্য কোনো উপায় নেই। আর এই ভাবনার নেতৃত্ব বহু আগেই দিয়েছিল ভারত।