স্বদেশি পণ্যে গর্ববোধ করুন, আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ডাক প্রধানমন্ত্রীর — ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু ‘জিএসটি বাচত উৎসব’

নয়াদিল্লি, ২১ সেপ্টেম্বর — নবরাত্রি উৎসবের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন। তিনি দেশবাসীকে ‘স্বদেশি’ পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতের সমৃদ্ধির মূলমন্ত্র হল আত্মনির্ভরতা এবং এই লক্ষ্য পূরণে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি উন্নত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের আত্মনির্ভর হওয়ার পথেই হাঁটতে হবে। আত্মনির্ভরতা শুধু সরকারের কোনো একটি প্রকল্প নয়, এটি আমাদের জাতীয় চরিত্রে পরিণত হওয়া উচিত। দেশীয় শিল্প, বিশেষ করে এমএসএমই খাত, এই আত্মনির্ভর ভারতের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।”

তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, “আমাদের দেশের মানুষের যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয়, সেগুলির অনেককেই আমরা নিজের দেশে তৈরি করতে পারি। সেইসব পণ্য আমদানির পরিবর্তে নিজে তৈরি করা উচিত। বিদেশি পণ্যের প্রতি অতি নির্ভরতা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে — অনেক সময় আমরা না জেনেই বিদেশি পণ্য ব্যবহার করি। এখন সময় এসেছে সেই চক্র ভাঙার।”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের উচিত এমন পণ্য কেনা, যেগুলি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ — যাতে রয়েছে আমাদের যুবসমাজের পরিশ্রম, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি। প্রতিটি বাড়িকে স্বদেশির প্রতীক করে তুলতে হবে, প্রতিটি দোকানে স্বদেশি পণ্যের প্রদর্শন করতে হবে। এভাবেই দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং আমাদের দেশের মুদ্রা দেশেই থাকবে।”

তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে আত্মনির্ভরতার তুলনা করে বলেন, “স্বাধীনতার সময় যেমন স্বদেশি আন্দোলন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, ঠিক তেমনি বর্তমানেও আত্মনির্ভরতার আন্দোলন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করবে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণের দ্বিতীয় অংশে দেশের কর ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আগামীকাল অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর, নবরাত্রির প্রথম দিন থেকে চালু হচ্ছে ‘জিএসটি বাচত উৎসব’ — যার লক্ষ্য দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী বাজার তৈরি করা ও বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও অনুকূল করে তোলা।

তিনি বলেন, “এই সংস্কার শুধু কর কাঠামোর পরিবর্তন নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক উৎসব। এর ফলে সাধারণ মানুষের মাসিক খরচ কমবে, তারা আরও বেশি জিনিস কিনতে পারবেন। একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও বাড়বে গতি। বিনিয়োগকারীদের জন্য ভারত আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, এবং প্রতিটি রাজ্য এর সুফল পাবে।”

এ মাসের শুরুতে জিএসটি কাউন্সিল যে নতুন কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে, তা অনুযায়ী এখন থেকে দেশে দুটি প্রধান জিএসটি স্ল্যাব কার্যকর হবে — ৫% এবং ১৮%। যেসব পণ্য এতদিন ১২% করের আওতায় ছিল, সেগুলিকে ৫% করের আওতায় আনা হয়েছে। যেসব পণ্য আগে ২৮% করের আওতায় ছিল, সেগুলির অধিকাংশই এখন থেকে ১৮% করের আওতায় পড়বে।

তবে বিলাসপণ্য এবং ‘সিন গুডস’ (যেমন: তামাকজাত পণ্য, বিলাসবহুল গাড়ি ইত্যাদি) এর ক্ষেত্রে ৪০% পর্যন্ত কর বিদ্যমান থাকবে, যেটি ‘কম্পেনসেশন সেস’ হিসেবে আরোপিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সংস্কার শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, এটি কৃষক, মধ্যবিত্ত, গৃহিণী, শিক্ষার্থী — সবার জন্যই উপকারী। নতুন জিএসটি কাঠামো আমাদের দেশের কর ব্যবস্থাকে আরও সরল ও স্বচ্ছ করে তুলবে। এটি দেশের মধ্যে উৎপাদন ও বিক্রির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।”

দেশবাসীর প্রতি তাঁর বার্তার শেষ অংশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসুন এই নবরাত্রিতে প্রতিজ্ঞা করি — আমরা যতটা সম্ভব স্বদেশি পণ্য ব্যবহার করব, দেশীয় শিল্পকে সমর্থন করব, এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ার যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করব।”

নবরাত্রির মতো শুভ সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বার্তা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং এটি ভারতীয় অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার এই আহ্বান কতটা বাস্তবায়িত হয়, তা আগামী দিনের ভারত নির্ধারণ করবে।