নয়াদিল্লি, ১৭ সেপ্টেম্বর: কেন্দ্রীয় সরকার ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করতে চলেছে ‘স্বাস্থ্য নারী, সশক্ত পরিবার অভিযান’ , যা দেশের মহিলা, কিশোরী এবং শিশুদের জন্য এক বিশাল স্বাস্থ্য উদ্যোগ। এটি ৮ম পোষণ মাহ উপলক্ষে আয়োজিত এবং চলবে আগামী বছর ২ অক্টোবর, গান্ধী জয়ন্তি পর্যন্ত। এই অভিযান যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের নেতৃত্বে, যেখানে আয়ুষ মন্ত্রকসহ অন্যান্য দপ্তরও সহযোগিতা করছে। এসএনএসপিএ-এর আওতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এক লক্ষেরও বেশি স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হবে—আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির, কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, জেলা হাসপাতাল ও অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এটি হবে ভারতীয় মহিলাদের ও শিশুদের জন্য ইতিহাসের বৃহত্তম স্বাস্থ্য আউটরিচ কর্মসূচি।
এই অভিযান মূলত এক ‘জন ভাগিদারি অভিযান’, যেখানে বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, অঙ্গনওয়াড়ি ও স্থানীয় কমিউনিটি কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য শিবিরে অ্যানিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, যক্ষ্মা ও সিকল সেল ডিজিজের স্ক্রিনিং করা হবে। পাশাপাশি মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য, কিশোরীদের টিকাকরণ, পুষ্টি, ঋতুস্রাব স্বাস্থ্যবিধি এবং জীবনযাপন পরামর্শ প্রদান করা হবে। এই কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল— সশক্ত নামে একটি পোর্টালের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিবিরগুলোর রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণ, স্ক্রিনিংয়ের ফলাফল ও রেফারাল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
কমিউনিটি স্তরে ‘নিক্ষয় মিত্র’ সহায়তায় যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা, পুষ্টি ও কাউন্সেলিং নিশ্চিত করা হবে। একইসঙ্গে, গাইনোকলজি, শিশু চিকিৎসা, চর্ম, মানসিক স্বাস্থ্য, চোখ ও দাঁতের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সেবা নিশ্চিত করা হবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। আয়ুষ মন্ত্রকের অংশগ্রহণ এই উদ্যোগে যোগ করছে একটি সমন্বিত হোলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি—যোগব্যায়াম, হেরবল চিকিৎসা, প্রাকৃতিক নিরীক্ষা ও জীবনযাপন পরামর্শ থাকছে এই অংশে। একইসঙ্গে, সোশ্যাল মিডিয়া, রেডিও, টেলিভিশনে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্যাম্পেইন চালু করা হবে। পুষ্টি কিট, ঘরোয়া প্রতিকার সামগ্রী বিতরণ এবং শিক্ষামূলক মাধ্যমের মাধ্যমে গ্রামীণ ও আদিবাসী অঞ্চলের মহিলাদের মধ্যে পৌঁছনোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এই কর্মসূচির ফলে দেশের মহিলাদের মধ্যে অনেক সময় অজানা থেকে যাওয়া রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস পাবে, মৃত্যুহার কমবে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপও কমবে। গ্রামীণ, শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমানতালে সেবা পৌঁছে যাবে। একই সঙ্গে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে পিএম-জেএওয়াই, আভা, আয়ুষ্মান ভারতসহ অন্যান্য সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে, যাতে শুধুমাত্র স্ক্রিনিং নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসাও নিশ্চিত হয়।
তবে এই উদ্যোগে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে—দুর্গম ও অবহেলিত এলাকায় পরিকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন, যথাযথ সরঞ্জাম ও ওষুধের সরবরাহ, রক্ষণশীল সমাজে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা, এবং রিয়েল-টাইম ডেটার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, অভিযান শেষ হওয়ার পরও এই ধরনের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সেবার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকারের মতে, সফলভাবে রূপায়ণ করা গেলে এসএনএসপিএ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রতিক্রিয়াশীল চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধমূলক ও কমিউনিটি-ভিত্তিক চিকিৎসার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে মহিলাদের স্বাস্থ্য আরও বেশি গুরুত্ব পাবে জাতীয় উন্নয়নের মূল কেন্দ্রে, এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যও অনেক বেশি সুরক্ষিত হবে।

