নয়া দিল্লি, ১৬ সেপ্টেম্বর — কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গড়করি সোমবার আন্তর্জাতিক ভ্যালু সামিট ২০২৫-এ ঘোষণা করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের নম্বর ওয়ান অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক দেশ হওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে। দ্রুত বর্ধিত রপ্তানি, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব পরিবহণ, এবং শক্তিশালী পরিকাঠামো নির্মাণকে ভিত্তি করে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশ।
গড়করি বলেন, “ভারত ইতিমধ্যেই জাপানকে টপকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অটোমোবাইল বাজার হয়ে উঠেছে। আজ বিশ্বের প্রায় সব প্রধান গাড়ি প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড ভারতে উপস্থিত। তাদের দৃষ্টি এখন শুধুমাত্র গাড়ি সংযোজন নয়, বরং সেগুলি ভারত থেকে বিশ্ববাজারে রপ্তানির দিকে।” তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের দুই চাকার যানশিল্প একাই তার উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি রপ্তানি করছে, যা বৈশ্বিক বাজারে ভারতের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে।
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের লক্ষ্যে, কেন্দ্র সরকার ইলেকট্রিক যানবাহন, হাইড্রোজেন ফুয়েল ও বিকল্প জ্বালানির উপর জোর দিচ্ছে বলে জানান গড়করি। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই হাইড্রোজেনচালিত ট্রাক চালু করেছি এবং দেশের দশটি রুটে পরীক্ষামূলক প্রকল্প চলছে। ভারতের লক্ষ্য, সবুজ পরিবহণের দুনিয়ায় নেতৃত্বে থাকা।” এই লক্ষ্যে টাটা মোটরস, অশোক লেল্যান্ড, রিলায়েন্স এবং ইন্ডিয়ান অয়েল সহ বেশ কয়েকটি বড় সংস্থা সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে।
সরকার ইতিমধ্যেই ৬০০ কোটি টাকার অনুদান বরাদ্দ করেছে হাইড্রোজেন জ্বালানি পরিকাঠামো তৈরির জন্য, এবং ইসোবিউটানল ও বায়ো-বিটুমেন-এর মতো বিকল্প জ্বালানির উপর ট্রায়াল চলছে। পাশাপাশি, গড়করি জানান, ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক নেটওয়ার্কর অধিকারী, যা দেশের দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়নের প্রমাণ। “আগে পানিপথ থেকে দিল্লি বিমানবন্দর পৌঁছাতে যেখানে তিন ঘণ্টা লাগত, এখন সেই সময় কমে ৩৫ মিনিটে দাঁড়িয়েছে,” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন। চেন্নাই–বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেসওয়ে ও ২৩,০০০ কোটির বেঙ্গালুরু রিং রোড প্রকল্প দেশের ভৌগলিক সংযুক্তি আরও জোরদার করবে।
টেকসই উন্নয়নেও ভারত এগিয়ে, জানিয়ে গড়করি বলেন, সড়ক নির্মাণে গাজিপুর ল্যান্ডফিল থেকে ৮০ লাখ টন বর্জ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে সেই “পর্বতের” উচ্চতা ইতিমধ্যে ৭ মিটার কমানো গেছে। তিনি আরও জানান, ধান খড় থেকে তৈরি বায়ো-বিটুমেন পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক বিকল্পগুলির চেয়ে বেশি কার্যকর এবং এটি পরিবেশদূষণ কমাতে সহায়ক, বিশেষ করে পরিশোধনযোগ্য জৈব বর্জ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে গড়করি বিদেশি প্রতিনিধিদের ভারতের সঙ্গে প্রি-কাস্ট রোড নির্মাণ, টানেল ইঞ্জিনিয়ারিং, হাইড্রোজেন পরিবহণ ব্যবস্থা এবং সার্কুলার ইকোনমি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে অংশীদার হতে আহ্বান জানান। “আমাদের কাছে সম্পদের অভাব নেই। আমাদের রাস্তাগুলি এখন মনিটাইজড এবং রাজস্ব প্রবাহ যথেষ্ট শক্তিশালী। এখন আমাদের প্রয়োজন আপনাদের উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও সহযোগিতা,” — এই আহ্বানে গড়করি ভারতের ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনরায় তুলে ধরেন।
সব মিলিয়ে, ভারত এখন কেবল একটি বিশাল বাজার নয়, বরং একটি গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ইনোভেশন হাব হয়ে ওঠার পথে শক্তপোক্ত অগ্রগতি করছে। গড়করি’র বক্তব্যে প্রতিফলিত হল সেই আত্মবিশ্বাস ও রোডম্যাপ, যা ভারতের ভবিষ্যত শিল্প নেতৃত্বের স্বপ্নকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।

