নেপালের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারে সুষীলা কার্কির নেতৃত্বে অভিজ্ঞ নেতৃত্বের জোর, ইতিহাসে প্রথম মহিলা অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত

কাঠমান্ডু, ১৫ সেপ্টেম্বর: নেপালের নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুষীলা কার্কি সোমবার তাঁর প্রথম মন্ত্রিসভা ঘোষণা করলেন। তিনজন অভিজ্ঞ ও অরাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের নেতা—কুলমান ঘিসিং, রাম আশোর খনাল এবং ওম প্রকাশ আর্যল—নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এই তিনজনই আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে ইতিহাস সৃষ্টি করে সবিতা ভাণ্ডারিকে নেপালের প্রথম মহিলা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি প্রবীণ আইনজীবী কৃষ্ণপ্রসাদ ভাণ্ডারির কন্যা এবং তাঁর এই নিয়োগ দেশটির বিচারব্যবস্থায় লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী কার্কির মন্ত্রিসভায় কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানি, জলসম্পদ ও সেচমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। ঘিসিং এর আগে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে দেশটি দীর্ঘস্থায়ী লোডশেডিং সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঘিসিং ভারতের জামশেদপুরের রিজিওনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর নিয়োগ ইঙ্গিত দেয় যে কার্কির সরকার জ্বালানি ও পরিকাঠামো খাতে বড় ধরনের সংস্কারে এগোতে চলেছে।

অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন রাম আশোর খনাল, যিনি একজন সাবেক অর্থসচিব এবং নেপালের রাজস্ব ও আর্থিক নীতিতে এক অভিজ্ঞ নাম। তিনি বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। খনালের ভারত-সংযোগ দীর্ঘদিনের, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওম প্রকাশ আর্যল, একজন খ্যাতনামা মানবাধিকার আইনজীবী, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বচ্ছতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা বিচার বিভাগে সংস্কার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কার্যকর দিশা দেখাতে পারে।

সবিতা ভাণ্ডারির অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ নিয়ে দেশজুড়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্কি প্রমাণ করেছেন, এই সরকার কেবল দক্ষতাকে নয়, বৈচিত্র্য ও প্রতিনিধিত্বকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। সবিতা একজন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং ন্যায়বিচার ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় তাঁর অবদান সুবিদিত।

প্রধানমন্ত্রী কার্কির এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সাম্প্রতিক ‘Gen-z’ যুব আন্দোলন, যা রাজনৈতিক সংস্কার ও কার্যকর নেতৃত্বের দাবিতে দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। সেই চাপের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত নতুন সরকারে রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম এবং দক্ষ প্রশাসকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কাঠমান্ডু শহরের জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরছে। আন্দোলনের পর শহরের রাস্তাঘাটে গাড়ির চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে, বাজারগুলোয় ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা বেড়েছে। ড্রোন ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে রাজধানী।

সুষীলা কার্কির নেতৃত্বাধীন এই নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। কুলমান ঘিসিংয়ের মতো জনপ্রিয় ও দক্ষ ব্যক্তিদের সরকারে নিয়ে আসা এবং সবিতা ভাণ্ডারির মতো নারীর শীর্ষ পদে নিয়োগ একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—এই সরকার প্রকৃত পরিবর্তন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন দেখার বিষয়, এই অন্তর্বর্তী সরকার আগামী দিনে কীভাবে স্থিতিশীলতা বজায় রেখে নেপালকে একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।