নয়াদিল্লি, ১৫ সেপ্টেম্বর:ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মহারাষ্ট্রে আগামী কয়েকদিন ধরে টানা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর। দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দুই থেকে তিন দিন অসম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, ও মণিপুর-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর পাশাপাশি, মধ্য মহারাষ্ট্র, কনকণ ও গোয়াতে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তর কনকণ ও মধ্য মহারাষ্ট্রে বিচ্ছিন্নভাবে চরম অতি ভারী বৃষ্টিপাত (২১ সেমি বা তার বেশি) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইএমডি জানিয়েছে, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও গুজরাটের কিছু অংশ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আরও সরতে শুরু করেছে, যা মৌসুমী বায়ুর পর্বতাহরণ নির্দেশ করে। গত ২৪ ঘণ্টায় উপ-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গ ও কনকণের কিছু অংশে চরম অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এছাড়াও, উত্তরাখণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, অসম, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, তেলেঙ্গানা ও উপকূলবর্তী অন্ধ্রপ্রদেশে অতি ভারী বৃষ্টি এবং পাঞ্জাব, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, পূর্ব মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, মধ্য মহারাষ্ট্র, মারাঠওয়াড়া ও উত্তর অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, নাগাল্যান্ডে টানা বৃষ্টির কারণে চাথে, পাগলাপাহাড় ও নিউ চুমুকেদিমা অঞ্চলে একাধিক ভূমিধস ও ধসের কারণে জাতীয় সড়ক-২৯–এর উপর দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। চাথে ব্রিজ থেকে নিউ চুমুকেদিমা পর্যন্ত একাধিক স্থানে ভূমিধস দেখা দেওয়ায় ডিমাপুর-চুমুকেদিমা-কোহিমা হাইওয়ের সংযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা আহতের খবর নেই বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তবে চাথে নদীর জল বিপদসীমার ওপরে উঠে যাওয়ার ফলে চুমুকেদিমা ও সিথেকেমা গ্রামের মধ্যে সংযোগকারী একটি ঝুলন্ত সেতু সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে। এই দুর্ঘটনার ফলে ওই দুটি গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাশাপাশি, ডিমাপুর শহরের একাধিক নিচু এলাকা জলের নিচে তলিয়ে গেছে এবং বহু ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলাবদ্ধতা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তাঘাটের কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও কোহিমা, পেখ ও ত্সেমিনিউ জেলাতেও একাধিক স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিমাপুরের অফিসিয়েটিং পুলিশ কমিশনার-কাম-ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (হেডকোয়ার্টার্স) এক জরুরি ভ্রমণ নির্দেশিকা জারি করেছেন, যেখানে তিনি সকল যাত্রী ও পরিবহণ সংস্থাগুলিকে বিকল্প রুট অনুসরণ এবং নির্ধারিত সময়সূচি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তীব্র বৃষ্টিপাত ও ধসের ফলে রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও, প্রশাসনের তরফ থেকে দ্রুত রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে নাগাল্যান্ড-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, কারণ প্রবল বর্ষণের ফলে স্থানীয় প্লাবন ও হঠাৎ জলস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে রাজধানী দিল্লি ও আশেপাশের এলাকা এই সময়ে মূলত শুষ্ক থাকবে বলে জানিয়েছে আইএমডি। ১৫ সেপ্টেম্বর আকাশ পরিষ্কার থাকবে, দুপুরের পর কিছুটা আংশিক মেঘাচ্ছন্ন হতে পারে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪°C থেকে ৩৬°C-এর মধ্যে থাকতে পারে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি। ১৬ সেপ্টেম্বর আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং দিনের তাপমাত্রা ৩৩°C থেকে ৩৫°C ও রাতের তাপমাত্রা ২৩°C থেকে ২৫°C-এর মধ্যে থাকবে। ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বরও একই ধরনের আবহাওয়া থাকবে, তবে তখন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কমতে পারে। দিল্লিতে বাতাসের গতি হালকা থেকে মাঝারি হবে এবং উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
সার্বিকভাবে, উত্তর-পূর্ব ভারত, মহারাষ্ট্র এবং আশপাশের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাতের কারণে একাধিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং আবহাওয়া দফতর সতর্কতা জারি করে নাগরিকদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। প্রশাসনও সর্বাত্মক তৎপরতা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।

