মণিপুর সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় কংগ্রেস, ‘দুই বছর পরের পদক্ষেপে দেরি, ততদিনে ৩৯টি বিদেশ সফর করেছেন মোদী

গুয়াহাটি, ১৫ সেপ্টেম্বর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক মণিপুর সফরকে “বিলম্বিত ও অপর্যাপ্ত” বলে কড়া সমালোচনা করেছে অসমের কংগ্রেস নেতারা। তারা অভিযোগ করেছেন, প্রায় দুই বছর ধরে চলা জাতিগত সহিংসতার সময়েও মোদী আন্তর্জাতিক সফরে ব্যস্ত ছিলেন, অথচ মণিপুরে তাঁর উপস্থিতি এতদিনে দেখা গেল।

সোমবার এক প্রেস কনফারেন্সে কংগ্রেস সাংসদ প্রদ্যুত বরদলৈ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর পৌঁছাতে আড়াই বছরের বেশি সময় লেগে গেল। অথচ এই সময়ে তিনি ৩৯টি বিদেশ সফর করেছেন, কয়েকটি দেশে একাধিকবারও গিয়েছেন। এটা কি তাঁর অগ্রাধিকারের প্রতিফলন নয়?” বরদলৈ আরও বলেন, মে ২০২২ সালে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে মোদীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও উপস্থিতির দাবি জানানো হয়েছিল।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরকে “টু লিটিল, টু লেট” বলে অভিহিত করে বলেন, “যখন মণিপুর জ্বলছিল, তখন প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ও অনুপস্থিতি রাজ্যবাসীর প্রতি অবহেলার ইঙ্গিত দেয়।”

শুধু সফরের দেরি নয়, প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির বক্তব্য নিয়েও কংগ্রেসের অভিযোগ। বরদলৈ অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী আসামের ভাষণে রাহুল গান্ধীর ভূমিকা নিয়ে ‘অর্ধসত্য’ উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, “অপারেশন সিন্দুর-এর সময় রাহুল গান্ধী ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে থাকার কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন। মোদী তাঁর বক্তব্যে সেটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন।”

কংগ্রেস নেতারা বিজেপির ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টারও সমালোচনা করেছেন। বরদলৈ বলেন, “বিজেপি প্রায়শই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে দোষারোপ করে। কিন্তু এসব বক্তব্যের কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। আগে তথ্য যাচাই করে তারপর এমন অভিযোগ করা উচিত।”

অসম বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া প্রধানমন্ত্রীর সাংস্কৃতিক বার্তা ও রাজনৈতিক কৌশলের মধ্যে দ্বৈততা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “একদিকে ভূপেন হাজরিকার জন্মশতবার্ষিকী পালন করছেন, যিনি তাঁর গানে সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি দলীয় বিভাজনের রাজনীতি করছে। এই দ্বিচারিতা বাংলার ও আসামের জনগণ বুঝে ফেলেছে।”

কংগ্রেস নেতারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর মণিপুর সফরের সময়কালের পাশাপাশি, তাঁর বক্তব্য ও নীতিগত অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের মতে, কেবল সফর করলেই দায়িত্ব পালন হয় না; সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং সহানুভূতিশীল নেতৃত্বই এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা।