নয়াদিল্লি, ১৪ সেপ্টেম্বর : হিন্দি দিবস উপলক্ষে গুজরাটের গান্ধীনগরে অবস্থিত মহাত্মা মন্দিরে শুরু হয়েছে পঞ্চম আখিল ভারতীয় রাজভাষা সম্মেলন। এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, রাজভাষা বিভাগের সচিব অংশুলি আর্য সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সাত হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা। উদ্বোধনী ভাষণে অমিত শাহ বলেন, হিন্দিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও নমনীয় ও আধুনিক করে তুলতে হবে। তিনি জানান, হিন্দি কেবলমাত্র কথোপকথনের ভাষা হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; একে বিজ্ঞানের, প্রযুক্তির, বিচারব্যবস্থার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভাষা হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার হিন্দি ভাষার প্রসারে নানা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ‘সারথি প্ল্যাটফর্ম’ এবং ‘হিন্দি শব্দ সিন্ধু কোষ’ অন্যতম। অমিত শাহ আশাপ্রকাশ করেন, ২০২৯ সালের মধ্যে হিন্দি শব্দ সিন্ধু কোষ হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ, যা কেবল ভাষার ভাণ্ডার নয়, বরং হিন্দিকে আধুনিক ও জ্ঞানের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পথও প্রশস্ত করবে। তিনি আরও বলেন, হিন্দি ভারতের বিভিন্ন ভাষা ও উপভাষার মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের কাজ করে চলেছে, যা জাতীয় সংহতির অন্যতম ভিত্তি। এই সংহতি বজায় রাখতে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হিন্দির সঙ্গে তাদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।
এদিন সম্মেলনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে কেন্দ্রের তরফ থেকে। ভাষাগত ব্যবধান দূর করার লক্ষ্যে চালু করা হয় ‘ভারতী’ নামের একটি নতুন বহুভাষিক অনুবাদ টুল। এই টুলের মাধ্যমে সরকারি ও প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার মধ্যে দ্রুত ও কার্যকর অনুবাদ সম্ভব হবে বলে জানানো হয়। অমিত শাহ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার সরকারি কাজে হিন্দির ব্যবহার বৃদ্ধির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায়, গত বছর হিন্দি দিবসে ‘ভারতীয় ভাষা অনুবাগ’ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ভারতের প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে কার্যকর অনুবাদ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা। তিনি জানান, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং ই-গভর্নেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতীয় ভাষাগুলিকে ভবিষ্যতের উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজ চলছে।
সম্মেলনে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল বলেন, ভাষা শুধু ভাবপ্রকাশের মাধ্যম নয়, এটি সংস্কৃতির বাহক। তিনি বলেন, গুজরাট রাজ্য হিন্দি ও আঞ্চলিক ভাষার সহাবস্থান এবং পারস্পরিক সমন্বয়ের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আঞ্চলিক ভাষাগুলির সংরক্ষণ ও প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেন এবং বিশেষ করে দেশের যুব সমাজকে স্থানীয় ভাষার ব্যবহারে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান। ভাষার প্রতি এই সম্মান ও গুরুত্বই ভারতকে একটি উন্নত ও ঐক্যবদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘অপারেশন সিন্দূর’ শীর্ষক একটি বিশেষ অধিবেশন, যেখানে হিন্দির প্রশাসনিক ব্যবহার ও প্রযুক্তিগত প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। রাজভাষা বিভাগের সচিব অংশুলি আর্য জানান, এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হল হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার মধ্যে সংহতি এবং সমন্বয় বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করা। তিনি বলেন, ‘ভারতী’ অনুবাদ টুলের সূচনা এই লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
অন্যদিকে, হিন্দি দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যমে একটি বার্তায় বলেন, হিন্দি কেবলমাত্র একটি ভাষা নয়, এটি ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন। তিনি হিন্দি ভাষার প্রসারে নিযুক্ত সকল ভাষাবিদ ও হিন্দিপ্রেমীদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবিধান সভায় হিন্দিকে দেবনাগরী লিপিতে ভারতের সরকারিভাষা হিসেবে গৃহীত করা হয়। সেই স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটি হিন্দি দিবস হিসেবে পালিত হয়। বর্তমানে হিন্দি বিশ্বের অন্যতম বহুল প্রচলিত ভাষা, যা ৫২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রথম ভাষা। আজকের এই হিন্দি দিবস কেবল ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন নয়, বরং ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর আদর্শ বাস্তবায়নের প্রতিফলন, যেখানে ভাষাগত বৈচিত্র্য একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

