নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তুতি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন সুসিলা কার্কি

কাঠমান্ডু, ১২ সেপ্টেম্বর : নেপালে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জেনারেশন-জেড নেতৃত্বাধীন দেশব্যাপী গণআন্দোলনের মাঝে, রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুসিলা কার্কি-কে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে সূত্রের খবর।

সুসিলা কার্কির নিয়োগ শুক্রবার বিকেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে, যা দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে। রাষ্ট্রপতির দপ্তর ‘শীতল নিবাস’ ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ আধিকারিকদেরও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার পরপরই দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুসিলা কার্কি একটি সম্মানীয় ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব। চলমান উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে তিনি একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্থিতিশীল অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব দিতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক আলোচনা ও জনদাবির প্রেক্ষিতে তাঁর নামই সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

তবে তাঁর পাশাপাশি আলোচনায় ছিলেন নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন প্রধান কুলমান ঘিসিং। বিদ্যুৎ সংকট দূর করে ঘিসিং নেপালের জনগণের মধ্যে প্রশংসিত হলেও, শেষ পর্যন্ত একটি অরাজনৈতিক ও বিচারিক ভাবমূর্তি সম্পন্ন ব্যক্তিকে সামনে আনার প্রয়াসে কার্কিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।

এই রাজনৈতিক রদবদল এমন এক সময়ে ঘটছে যখন সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিরাট আকারের দুর্নীতিবিরোধী গণআন্দোলন গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার কর্তৃক সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার অল্পকালীন সিদ্ধান্তই এই আন্দোলনের মূল প্রেরণা, যা জনগণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখেছে।

আন্দোলন শুরু হয় কাঠমান্ডু থেকে এবং দ্রুত পোখারা, বুটওয়াল, বিরগুঞ্জ-সহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,০০০-এরও বেশি। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এই প্রেক্ষিতে, সুসিলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হলে তা নেপালের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনার এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।