(Update)কৈলাসহরে কংগ্রেসের বনধ ঘিরে উত্তেজনা, ভাঙচুর, প্রতিবাদ

আগরতলা, ১১ সেপ্টেম্বর : ঊনকোটি জেলা কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ালো গোটা কৈলাসহরে। বনধ চলাকালীন গাড়ি ভাঙচুর, চালককে মারধর, এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে প্রশাসন। জেলা পুলিশ সুপার সুধাম্বিকা আর সহ গোটা পুলিশ প্রশাসন ময়দানে ছিলেন।

চালক রাহুল সদ্দার অভিযোগ করেন, আমরা জানতাম না কৈলাসহরে বনধ চলছে। ধর্মনগর থেকে মাল গাড়ি নিয়ে আসছিলাম। চিনিবাগান নাকা পয়েন্টে পুলিশ আমাদের আটকে দুইশো টাকা ঘুষ নেয়। কিন্তু তারা একবারও বলেনি যে এখানে বনধ চলছে। এরপর নাকা পয়েন্ট পার হতেই কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের গাড়ি ভাঙচোর করে এবং আমাকে ও আমার সঙ্গীকে মারধর করে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি, সারা শরীরে ব্যথা করছে। আরেক চালকও অভিযোগ করেন, আমার গাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল, তবুও কংগ্রেস কর্মীরা এসে ভাঙচুরর চালায়। ঘটনা প্রসঙ্গে ঊনকোটি জেলা পুলিশ সুপার সুধাম্বিকা আর বলেন, বনধকে কেন্দ্র করে ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে বটে, তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে, বনধের বিরোধিতায় রাস্তায় নামে ভারতীয় জনতা পার্টি। কৈলাসহর মন্ডলের সভাপতি প্রীতম ঘোষের নেতৃত্বে সকাল থেকেই কয়েক হাজার বাইক নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন বিজেপি কর্মীরা। প্রীতম ঘোষ বলেন—জনবর্জিত কংগ্রেস যে কর্মনাশা বনধের ডাক দিয়েছে তা প্রত্যাহার করার জন্য আমরা মানুষকে সচেতন করছি। সবাইকে কাজে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছি। তাছাড়া, বনধের ব্যাপারে ভারতীয় জনতা পার্টির ঊনকোটি জেলা কমিটির সভাপতি বিমল কর বলেন, বিরোধী দল তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের লক্ষ্যে আন্দোলন কর্মসূচি করতেই পারে, কিন্তু বনধ কোন সমাধানের রাস্তা নয়। পুজোর প্রাক মুহূর্তে ও পরীক্ষার দিন এই বনধ ঘোষণা করে সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে কংগ্রেস। বনধের নামে সড়ক অবরোধ করে শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল কংগ্রেস। তাতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে রোগীদের।

আজ বনধের সর্মথনে শহরের পূর্ত দপ্তর, মহকুমা শাসকের অফিসে উর্দ্ধতন কর্তাদের উপস্থিতি থাকলেও কর্মচারীদের সংখ্যা ছিল কম। সর্বত্রই দোকানপাট অধিকাংশ ক্ষেত্রে বনধ সমর্থনে বন্ধ দেখা যায়। এদিকে, বনধের সমর্থনে সকাল থেকে পিকেটিং করছে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক সহ অধীকাংশ সরকারি দপ্তর বন্ধ রয়েছে। কৈলাসহরের মূল বাণিজ্যিক কেন্দ্র পানিচৌকি বাজার সহ গ্রামীন এলাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ।

১১ দফা দাবিগুলো হল, শহরের জল নিষ্কাশনের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা, পুরাতন ডাক বাংলো থেকে রাঙ্গাউটি পর্যন্ত শহর উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে শহরের সংযোগের মূল সড়কটির গুনগত মানের সংস্কার সাধন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী কৈলাসহরে বিমানবন্দর ও রেল পরিষেবা চালু করা, রেগার কাজ, গতবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সাহায্য করা, বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করা, এই সমস্ত জ্বলন্ত দাবি নিয়ে আজকের বনধ।

অন্যদিকে সারা রাজ্যের সাথে কৈলাশহর মহকুমার বেশ কয়েকটি সরকারি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্র ও ছাত্র ছাত্রীদের বনধের আওতার বাইরে রাখলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে অনেকটাই বেগ পেতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে হয়েছে।

এক্ষেত্রে জেলা শিক্ষার অধিকারিক জানিয়েছেন, এই বনধেরর জন্য যারা পরীক্ষা দিতে পারবেন না তাদের পরবর্তী সময় পরীক্ষা নেওয়া হবে এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এদিকে, জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহাম্মদ বদ্রুজ্জামান ও কৈলাশহরের বিধায়ক বিরজিৎ সিনহা বনধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করায় কৈলাসহরবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন এই বনধ কৈলাশহর মানুষের স্বার্থে বনধ। তাই সকলেই এই বনধকে সমর্থন করেছেন। এই ১১ দফা দাবি জুতো পূরণ না হলে পুজোর পরেই একাধিক আন্দোলন কর্মসূচিতে মাঠে নামবে জেলা কংগ্রেস।