রাশিয়ার যুদ্ধতহবিলে তেল বিক্রির মাধ্যমে অর্থ যাচ্ছে ভারত-চীন-ব্রাজিলে: দাবি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের, ভারতের পাল্টা প্রতিবাদ

নয়াদিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর : ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান এখনো অব্যাহত, আর সেই যুদ্ধ চালানোর অর্থ আসছে তেল বিক্রি থেকে—এমনটাই দাবি করলেন ন্যাটোর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ হুইটেকার। ফক্স নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হুইটেকার বলেন, রাশিয়া ভারত, চীন ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলিতে তেল বিক্রি করে যুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। তিনি এই দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের আহ্বান জানান।

“এই যুদ্ধে যে অর্থ খরচ হচ্ছে, তা মূলত রাশিয়ান তেলের বিক্রি থেকেই আসছে। আমি মনে করি পরবর্তী ধাপে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ব্যবসা করার খরচ বাড়িয়ে দিতে হবে এবং তার রাজস্ব কমাতে হবে,” বলেন হুইটেকার।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি দুর্বলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং তেলের রাজস্বই এখনো তাদের প্রধান উৎস। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো প্রয়োজন।

মার্কিন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতের ওপর এইভাবে দোষারোপ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অন্যায্য। আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রক আরও জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো রাশিয়ার অন্যতম বড় গ্যাস ক্রেতা এবং চীন রাশিয়ার কাঁচা তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। ২০২৪ সালে ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার পণ্যের বাণিজ্য ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো এবং সেবার বাণিজ্য ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো। সেই বছর ইউরোপীয় আমদানিকৃত রাশিয়ান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমাণ ছিল রেকর্ড ১৬.৫ মিলিয়ন টন।

ভারত এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছে, ইউরোপ-রাশিয়া বাণিজ্য শুধু জ্বালানিই নয়, বরং সার, রাসায়নিক, লোহা-ইস্পাত ও যন্ত্রপাতিও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাশিয়া থেকে নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড, বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য প্যালাডিয়াম এবং রাসায়নিক ও সার আমদানি করে যাচ্ছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর ৫০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। সেই সঙ্গে রাশিয়ান তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত ২৫% জরিমানাও চাপানো হয়েছে। এর ফলে ভারতের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় রয়েছেন। মোদি উত্তর দিয়ে বলেছেন, “ভারত ও আমেরিকা প্রকৃত বন্ধু এবং প্রাকৃতিক অংশীদার। আমি নিশ্চিত যে আমাদের বাণিজ্য আলোচনা দুই দেশের অংশীদারিত্বের অসীম সম্ভাবনা উন্মোচনে সহায়ক হবে।”