নয়াদিল্লি, ৪ সেপ্টেম্বর : ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর গুজরাটের জন্য আগামী তিন দিন এবং পশ্চিম মধ্যপ্রদেশের জন্য আগামীকাল পর্যন্ত ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে, কারণ এই এলাকাগুলিতে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বিদর্ভ, ছত্তিশগড় ও ওড়িশার কিছু জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। পূর্ব রাজস্থান, কনকন ও গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে, যেখানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ অভ্যন্তরীণ কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানার কিছু জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎসহ দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি। দিল্লি এবং এনসিআর অঞ্চলে গত রাত থেকে হালকা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে এবং বৃহস্পতিবারেও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে যমুনা নদীর জলস্তর ২০৭ মিটার অতিক্রম করেছে, যা ১৯৬৩ সালের পর পঞ্চমবার। এর জেরে রাজধানীর অন্যতম প্রাচীন শ্মশানঘাট নিগমবোধ ঘাটে জল ঢুকে পড়ায় কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়েছে। দিল্লি, নয়ডা ও গাজিয়াবাদে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ এবং গুরগাঁওয়ে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে।
এদিকে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিপ্রেশনে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে দক্ষিণ ছত্তিশগড়, দক্ষিণ ওড়িশা, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং দক্ষিণ অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। কনকন, গোয়া, মহারাষ্ট্রের ঘাট অঞ্চল এবং উপকূলীয় কর্ণাটকে আগামী কয়েকদিন অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ পরিকল্পনা কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চল, বিশেষত হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে আগামী কয়েকদিন প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই দুই রাজ্যের জন্যও ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করেছে যে এই বৃষ্টিপাতে ভূমিধস, রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং যাতায়াত ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরেও আবহাওয়া অনুকূল নয়। এখানকার অনেক জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঝেলম, তাওয়ী সহ অন্যান্য নদনদীর জলস্তর হঠাৎ বেড়ে বন্যা বা জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হিল রুটে যাতায়াত করা মানুষদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
তেলেঙ্গানা, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের কিছু অংশ—বিশেষত কনকন ও গোয়ায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই এলাকাগুলিতেও ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, এবং অরুণাচল প্রদেশে আগামী এক সপ্তাহ বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি চলবে। বিশেষ করে ৪ ও ৭ সেপ্টেম্বর অরুণাচল প্রদেশে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
দক্ষিণ ভারতের কেরালা, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশে আগামী সাতদিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু জায়গায় বজ্রপাত ও দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ৮ই সেপ্টেম্বর রাত থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত আবারও এক দফা মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে পারে এবং ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থিতিশীল আবহাওয়া বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএমডি সমস্ত রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকতে এবং সরকারি নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে নদীর ধারে, পাহাড়ি রাস্তায় অথবা দুর্বল কাঠামোর নিকটে যাতায়াত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। যেকোনো বিপর্যয় এড়াতে লোকজনকে আবহাওয়ার আপডেট ও সতর্কবার্তা নিয়মিত অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

