রাজনীতির নোংরা খেলায় মেতেছেন প্রদ্যোত, জমি ব্যবহারের জন্য জনজাতি পরিবার ন্যায্য টাকা পেয়েও বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সুড়সুড়ি, উত্তর ত্রিপুরা জেলাশাসকের বক্তব্যে সত্যের উন্মোচন

আগরতলা, ১ সেপ্টেম্বর : সমরে এডিসি নির্বাচন, নিশ্চয়ই গভীর চিন্তায় ফেলেছে। বিধায়ক এবং এমডিসি-রা ঘরে বসে থাকেন, সেই চিন্তাও কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ফলে, ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল নেওয়া হচ্ছে, এমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। উত্তর ত্রিপুরা জেলায় দামছড়ায় গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজে বাধা দেওয়ায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপকে কেন্দ্র করে বাজার গরম করে ফেলেছেন তিপরা মথার প্রতিষ্ঠাতা তথা এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ পকেটস্থ করেও আরও টাকার জন্য প্রশাসনের কাজে বাধা দিয়ে উল্টে প্রদ্যোতের কাছে জনজাতি রমণীর কাতর আবেদনের ভিডিও ত্রিপুরায় সাংঘাতিকভাবে শোরগোল ফেলেছে। এসবের মাঝে শুধুই যে রাজনীতির নোংরা খেলা শুরু হয়েছে, তা অস্বীকার করা সুযোগ নেই। কারণ, উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক স্পষ্ট জানিয়েছেন, জমির জন্য ন্যায্য টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধুমাত্র একটি পরিবার আরও বেশি টাকার দাবি তুলে কাজে বাধা দিচ্ছে।

আজ সকালে ব্যস্ত অফিস টাইমে সামাজিক মাধ্যমে প্রদ্যোতের একটি পোস্ট রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ওই পোস্টে কিছু ভিডিও শেয়ার করে তিনি লেখেছেন, দামছড়ার কাছে একটি গ্রামের দরিদ্র গ্রামবাসীদের কাছ থেকে আমি বেশ কয়েকটি ইমেল এবং কল পেয়েছি, যাদের আইজিজিএল কর্মকর্তারা এবং কিছু সরকারি কর্তৃপক্ষ হুমকি দিচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি আরও লেখেন, আমার প্রিয় যোদ্ধারা আপনারা ভুলে যাবেন না যে আমাদের প্রথম এবং একমাত্র দায়িত্ব হল জনগণের অধিকার রক্ষা করা। গ্রামে যান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং আইন অনুসারে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করুন। এটি কোনও আপিল নয়, বরং একটি আদেশ। আপনার জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে দামছড়ার বাসিন্দা হতে হবে না।

তিনি এখানেই থেমে থাকেননি। কিছুক্ষণ পরেই ফেইসবুক লাইভে এসে কার্যত উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন বলে অভিযোগ। জোর করে গরীব জনজাতিদের বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে এবং তাতে কোনভাবেই চুপ থাকা যাবে না। তাঁর দাবি, সরকার গরীব মানুষকে চোখ রাঙাচ্ছে, মারধর করছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে রাস্তায় নামলে তাঁদের উগ্রপন্থী বলা হচ্ছে। তিনি এদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের দলীয় কর্মী, বিধায়ক এবং এমডিসিদের আদেশ করেন, বাড়ি থেকে বের হোন এবং গরীব মানুষের অধিকার রক্ষায় পাশে দাঁড়ান। তাঁর হুশিয়ারি, অত্যাচার হলে ঘরে চুপ করে বসে থাকবো না।

প্রদ্যোতের ফেইসবুক লাইভ দেখে সকলেই নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করবেন, দামছড়ায় গরীব জনজাতিদের সাথে অত্যাচার শুরু হয়েছে। কারণ, তিনি দিনের প্রথম ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আরও একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে এক জনজাতি যুবক সরাসরি সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে ঘুষ চাওয়া হয়েছে, যা তিনি না দেওয়ায় তাঁর পরিবার আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি তাঁর বৃদ্ধ বাবা ভয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি দাবি করেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য তাঁদের টাকা দেওয়া হয়নি।

কিন্তু, ত্রিপুরা প্রশাসনের দাবি সম্পূর্ণ উল্টো। এমনকি, স্থানীয় অধিকাংশ বাসিন্দারা প্রশাসনের দাবি সম্পূর্ণ সত্য বলে জানিয়েছেন। এ-বিষয়ে উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক চাঁদনী চন্দ্রন-এর যোগাযোগ করা হলে তিনি সামগ্রিক বিষয় সবিস্তারে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নর্থ ইস্ট গ্যাস গ্রিড প্রজেক্টের অধীনে কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন হক চাইছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অসম ও মিজোরামের সাথে ত্রিপুরাকে গ্যাস পাইপলাইনে যুক্ত করা হবে। সে মোতাবেক ইন্দ্রধনুষ গ্যাস গ্রিড লিমিটেড ওই কাজ শুরু করেছে।

তাঁর দাবি, সরকারী নিয়ম মেনে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। এমনকি, সকলকেই জমির সরকারী মূল্য ধরেই ক্ষতিপূরণের অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু একটি পরিবার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক বলেন, জমির মালিক তেইনেরিন ত্রিপুরাকে এক কানি জমির জন্য ৩৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই জমির ব্যবহার করেই গ্যাসের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই এলাকায় আরও অনেকেই নিজেদের জমি ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছেন এবং পর্যাপ্ত অর্থ ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছেন। কিন্তু, তেইনেরিন ত্রিপুরার টাকা বুঝে নেওয়ার পর ঝামেলা করছেন।

উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক চাঁদনী চন্দ্রন-র বক্তব্য, ওই জমির সর্বোচ্চ সরকারী দর ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু, তাঁরা শুরু থেকেই আরও বেশি টাকার দাবি করে আসছিলেন, তাই তাঁদের ১ কানি জমির জন্য ৩৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা পেয়ে তাঁরা জমি ব্যবহারের সম্মতি পত্রে স্বাক্ষরও করেছেন। কিন্তু, এখন তাঁরা ৯০ লক্ষ টাকা দিতে হবে দাবি করছেন। উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক বলেন, তেইনেরিন ত্রিপুরার কন্যা মীনাক্ষী ত্রিপুরা দিল্লিতে বসবাস করেন। তিনি ফেইসবুকে ভিডিও আপলোড করে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। কারণ, ইতিপূর্বে তাঁদের সাথে একাধিকবার আলোচনার জন্য প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, তাঁদের তরফে কেউ কখনোই আলোচনায় অংশ নেননি। তাই, বাধ্য প্রশাসন যেভাবেই হোক ওই প্রজেক্টের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে।

চাঁদনী চন্দ্রন সাফ জানিয়েছেন, ওই প্রজেক্টকে ঘিরে উচ্ছেদের কোন প্রশ্নই আসেনা। ওই সমস্ত জমিতে মাটির তলায় শুধুমাত্র গ্যাসের পাইপলাইন বসানো হবে। তাতে, কারোর বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তবুও, অযথা উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।