নয়ডা পণের কেসে নতুন মোড় : নিহত নিকির পরিবারকেই এবার পণ নির্যাতনের অভিযোগে কাঠগড়ায় তুললেন পুত্রবধূ

গ্রেটার নয়ডা, ২৭ আগস্ট: নিকি ভাটির পণ-নির্যাতনে মৃত্যুর মামলায় নতুন এক চাঞ্চল্যকর মোড় এসেছে। নিকির পরিবার, যারা এর আগে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণ চাওয়ার অভিযোগে হত্যা মামলা দায়ের করেছিল, এবার নিজেরাই পণ দাবি এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। অভিযোগ এনেছেন নিকির ভাই রোহিতের বিচ্ছিন্ন স্ত্রী, মীনাক্ষী।

২০২৪ সালে মীনাক্ষী একটি এফআইআর দায়ের করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন, বিয়ের মাত্র দুই মাসের মধ্যেই স্বামী রোহিত তাকে মারধর শুরু করেন। কারণ, পণের বিনিময়ে দেওয়া গাড়ি — একটি সিয়াজ — তার পছন্দ ছিল না। তিনি একটি স্করপিও চেয়েছিলেন এবং পরে সেই সিয়াজ গাড়িটি বিক্রি করে দেন।

মীনাক্ষী জানান, তার পিতা মহামারীর সময় মৃত্যুবরণ করেন, তখন পর্যন্ত তিনি তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, রোহিত ছাড়াও তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ নিকি এবং অপর এক ননদ কাঞ্চন — যাঁরাও ভাটি পরিবারে বিবাহিত — তাঁকে নিয়মিত মারধর করতেন।

মীনাক্ষীর পরিবারের অভিযোগ, একটি মৌখিক সমঝোতায় রোহিতের পরিবার ৩৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেবে বলে জানায়, এবং এর বিনিময়ে মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু সেই টাকা ইতিমধ্যেই বিয়ের খরচে ব্যয় হয়ে যায় এবং পরিবার অর্থ ফেরত দেয়নি।

এরপরও নির্যাতন থামেনি। অভিযোগ, মীনাক্ষীর ভাই যখন তাকে নিতে শ্বশুরবাড়িতে যান, তখন তাকেও মারধর করা হয় এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

নিকির পরিবার দাবি করে, গত ২১ আগস্ট তার স্বামী বিপিন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধর করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।

নিকির বোন কাঞ্চন জানিয়েছেন, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং দেখেছেন কিভাবে নিকিকে আক্রমণ করা হয়। নিকি জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর দেখেন, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিপিন, তার বাবা-মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে পণ-নির্যাতন ও খুনের মামলা দায়ের হয়।

তবে ঘটনার সঙ্গে বিপরীত দাবি উঠে আসে একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে। নিকির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভিডিওতে দেখা যায়, বিপিনের বাবা শেষকৃত্য সম্পন্ন করছেন, যা প্রশ্ন তোলে, তাহলে তারা পালিয়েছিলেন কীভাবে?

এছাড়াও, একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় বিপিন বাড়ির বাইরে ছিলেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে, আসলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কিনা।

নিকির পরিবার প্রথমে ঘটনাটিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বলে চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু চিকিৎসক ও পুলিশের তদন্তে জানা যায়, তাকে পেট্রোল বা থিনার জাতীয় দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে আগুন ধরানো হয়েছিল।

এই ঘটনার নানা দিক থেকেই উঠে আসছে পণ-নির্যাতনের সামাজিক বাস্তবতা ও প্রতিহিংসার জটিলতা, যা প্রশাসনের জন্য তদন্তকে আরও জটিল করে তুলছে।