নয়াদিল্লি, ২৭ অগস্ট : কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসংখ্যাগত পরিবর্তন সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এবং এসব পরিবর্তন নিছক ভৌগোলিক কারণে হচ্ছে না, বরং এগুলি একটি “পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ” হতে পারে। গতকাল নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী ‘ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম’ কর্মশালার উদ্বোধনী ভাষণে এই মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির উন্নয়ন ও সুরক্ষার জন্য এই প্রকল্প চালু করেছে। কর্মশালাটিতে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা, সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবরা, সীমান্ত জেলা গুলির জেলা শাসকেরা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও গোয়েন্দা দফতরের শীর্ষ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম তিনটি মূল স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে তৈরি— সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের অভিবাসন রোধ করা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিটি কল্যাণমূলক প্রকল্পের শতভাগ সুবিধা সীমান্তবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এবং এই গ্রামগুলিকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে তারা জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম শক্তিশালী উপকরণ হয়ে ওঠে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জনসংখ্যার যে পরিবর্তন ঘটছে, তা কেবলমাত্র ভৌগোলিক কারণে নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ঘটানো হচ্ছে। এটি কোনওভাবেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।” তিনি বলেন, সীমান্তের ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সব ধরনের বেআইনি দখলদারি, বিশেষ করে ধর্মীয় স্থাপনার আড়ালে তৈরি করা অবৈধ কাঠামো, অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা দরকার।
তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব ও সীমান্ত জেলাগুলির জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের এই ইস্যুটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। জেলার প্রশাসনের উচিত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেআইনি দখলদারি চিহ্নিত ও অপসারণ করা।”
ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রামের আওতায় এমন গ্রামগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যেগুলি সীমান্তবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটন উন্নয়ন, সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে মানুষের বসবাসের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অমিত শাহ জানান, প্রকল্প চালুর পর অরুণাচল প্রদেশের একাধিক সীমান্ত গ্রামে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, “যদি পর্যটন দফতর হোমস্টে ব্যবস্থাকে সীমান্তবর্তী গ্রামে প্রসারিত করে এবং বুকিং ব্যবস্থায় সহায়তা করে, তবে প্রতিটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে পারবে। এতে করে স্থানীয়রা আর স্থান পরিবর্তনের কথা ভাববে না।”
তিনি আরও বলেন, ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রামের প্রথম পর্যায়ে প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সীমিত, কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে এটি বদলাতে হবে। প্রতিটি জেলাশাসকের উচিত, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে গৌরবের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা এবং তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে মজবুত করার জন্য জেলা স্তরে উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা। রাজ্যের গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তরগুলিকে এই প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “যে গ্রামগুলি ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই গ্রামগুলিই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
উল্লেখ্য, ভিভিপি একটি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত প্রকল্প, যার উদ্দেশ্য সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন, স্থানীয়দের জীবিকা নিশ্চিতকরণ, সীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ সীমান্ত সুরক্ষা এবং সীমান্তবাসীদের জাতীয় মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্ত করা।
সার্বিকভাবে, অমিত শাহের বক্তব্যে স্পষ্ট, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যে কোনও প্রকার জনসংখ্যাগত পরিবর্তন বা বেআইনি দখলদারিকে সরকার আর কোনওভাবেই হালকাভাবে নিতে রাজি নয়। সরকারের লক্ষ্য সীমান্তবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলি প্রতিহত করা।

