ত্রিপুরায় ভিলেজ কমিটির নির্বাচনে বিলম্বের কারণ জানাতে নোটিশ জারি সুপ্রিম কোর্টের

নয়াদিল্লি ও আগরতলা, আগস্ট ২৫ : ত্রিপুরা উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদ (টিটিএএডিসি) আইনের অধীনে ভিলেজ কমিটি নির্বাচন দীর্ঘদিন বিলম্বের কারণ জানাতে নোটিশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি বি আর গভাই এবং বিচারপতি এন ভি অন্জারিয়ার খন্ডপীঠ সোমবার ওই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আদালত নির্বাচন কমিশন (ইসিআই), ত্রিপুরা রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারকে একটি নোটিশ জারি করেছে এবং চার সপ্তাহের মধ্যে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে ভাষণ খুশি তিপরা মথার প্রতিষ্ঠাতা তথা এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক আধিকারিক হরণে আমি চুপ থাকতে পারিনা।

প্রসঙ্গত, অন্তিমবার ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী ত্রিপুরায় ভিলেজ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২৭ ফেব্রুয়ারী রাজ্য নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা দিয়েছিল। প্রথা অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু, ভিলেজ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও ত্রিপুরায় আজ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২১ সালে ভিলেজ কমিটির মেয়াদ সমাপ্ত হয়েছে। ওই সময় করোনার প্রকোপের কারণ দেখিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সত্বেও নির্বাচন নিয়ে ত্রিপুরা সরকার রা করছিল না।

ভিলেজ কমিটির নির্বাচনের দাবি জানিয়ে শেষে ত্রিপুরা হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল এবং আদালত ছয় মাসের মধ্যে ভিলেজ কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশও দিয়েছিল। তা সত্বেও কোন হেলদোল দেখা যায়নি। ফলে, মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আজ সুপ্রিম কোর্ট ত্রিপুরায় ভিলেজ কমিটির নির্বাচনে বিলম্বের কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ জারি করেছে।

আদালতের নির্দেশ শুনেই লাফিয়ে উঠেছেন তিপরা মথার প্রতিষ্ঠাতা তথা এমডিসি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নোটিশ জারি করার জন্য আমি সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে এই বিলম্বের কারণে ভুগছে। যারা এই অবস্থা তৈরি করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। সাথে তিনি যোগ করেন, নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থাকলেই যদি কেউ জনজাতি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তবে তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ত্রিপুরার জনজাতিরা সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী স্থানীয় স্বশাসনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। তাঁদের অধিকার হরণ করা হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না।

প্রসঙ্গত, প্রদ্যোত ইতিমধ্যেই গ্রাম কমিটি নির্বাচনের বিলম্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। তাঁর দাবি, গ্রাম কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও নির্বাচন না হওয়ায় ত্রিপুরার জনজাতি জনগণ প্রশাসনিকভাবে উপেক্ষিত হয়ে পড়েছেন এবং তাঁদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রদ্যোতের এই অবস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং জনজাতি জনগণের স্বার্থে একটি দৃঢ় বার্তা। রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, কেন এখনো নির্বাচন সম্পন্ন করা যায়নি এবং কেন সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারকে তাদের বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যে বিষয়টির যথাযথ সমাধান না হলে আদালত কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।